নেত্রকোনার মদনে ঘুষ দিয়ে ও মেলেনি সরকারি নলকূপ

ঘুষ নিয়েও সরকারি আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকূপ না দেওয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে জাতীয় পার্টির নেতা শহিদুল ইসলাম শফিক ও আনোয়ার হোসেন নামের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী নারী তামান্না আক্তার উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন ইউএনও। কিন্তু নির্দেশ দেওয়ার ২০ দিন অতিবাহিত হলেও কোন রকম প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্তকারী ৃ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী। এ নিয়ে হতাশায় ভুক্তভোগী তামান্না আক্তার।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী নারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের মনিকা গ্রামের জিয়াউর রহমানের স্ত্রী তামান্না আক্তার। তিনি সুপেয় পানির জন্য আর্সেনিকমুক্ত একটি সরকারি গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করতে উপজেলা শহরে আসেন।

এ সময় পরিচয় হয় মদন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শফিক ও উপজেলা মেম্বার এসোসিয়েশনের সভাপতি চানগাও ইউনিয়নের সদস্য আনোয়ার হোসেনের সাথে। সরকারি নলকূপ পেতে হলে টাকা দিতে হবে জানান তারা। পরে তিনি সুদে টাকা এনে ২০২৩ সালের ১০ই অক্টোম্বর শফিকের চেম্বারে বসে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন।

ঘুষ নিয়ে তাকে নলকূপ না দিয়ে বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন শহিদুল ইসলাম শফিক ও আনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তামান্না আক্তার। কিন্তু কোন রকম সুরাহা মেলেনি। সর্বশেষ বিচারের আশায় ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তামান্না আক্তার।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন ইউএনও। কিন্তু নির্দেশ দেওয়ার ২০ দিন অতিবাহিত হলেও কোন রকম প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল বারী। এ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন ভুক্তভোগী তামান্না আক্তার।

ভুক্তভোগী তামান্না আক্তার জানান,‘ আমি সুদে টাকা এনে একটি আর্সেনিকমুক্ত সরকারি টিউবওয়েলের জন্য শফিক ও আনোয়ার মেম্বারকে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। দুই বছর ধরে আমাকে শুধু আশ্বাস দিয়েছে। আমার টাকা ফেরৎ পেতে ও তাদের বিচারের দাবিতে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এতেও কোন কাজ হচ্ছে না। আমি তাদের বিচার দাবি করছি।’

উপজেলা মেম্বার এসোসিয়েশনের সভাপতি চানগাও ইউনিয়নের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান,‘আমি কোন টাকা নেইনি। শহিদুল ইসলাম শফিক তামান্নার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নলকূপ দেওয়ার জন্য আমাকে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু আমি দিতে পারিনি। এ নিয়ে তামান্না আক্তার শফিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে।’

শহিদুল ইসলাম শফিক জানান,‘ নলকূপের জন্য তামান্না আক্তার আমার রুমে বসে আনোয়ার মেম্বারকে দুই কিস্তিতে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছে। আমি নিজে গুনে আনোয়ার মেম্বারকে দিয়েছি। এখন আনোয়ার মেম্বার অস্বীকার করে।’

এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল বারী জানান,‘ অভিযোগ কপি পেয়ে আমি আনোয়ার মেম্বারকে ফোন দিয়েছিলাম। বলছিলাম তারা তিনজন যেন বিষয়টি সমাধান করে আমার সাথে এসে দেখা করে। কিন্তু তারা এখনো এসে দেখা করেনি।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত জানান,‘ অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো কেন প্রতিবেদন দাখিল করেনি বিষয়টি খোঁজ নিবো। এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’