নেত্রকোনার মদনে টিসিবি পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
নেত্রকোনার মদনে টিসিবি পণ্য বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। উপজেলার মাঘান ইউনিয়নে স্বল্প আয়ের মানুষ ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি পণ্য ক্রয়ের তালিকায় কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এর নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালী ডিলারের হাতে। দীর্ঘদিন ধরে ওই ইউনিয়নে পণ্য বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করে যাচ্ছে নাসের স্টোর নামীয় ডিলার প্রতিষ্ঠান।
এ নিয়ে মাঘান ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ শাহীন মিয়া ওই ডিলারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানাযায়, নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে তিনটি খাদ্যপণ্য-চাল, ডাল ও তেল বিক্রি কর্মসূচি শুরু করেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-(টিসিবি)। এ কর্মসূচির আওতায় মদন উপজেলার পৌর শহরসহ ৮টি ইউনিয়নে টিসিবি পণ্য বিক্রিতে নিযুক্ত করা হয় ৯ জন ডিলার। উপজেলায় টিসিবির আওতায় মোট(ফ্যামিলি কার্ডপ্রাপ্ত) সুবিধাভোগী রয়েছেন ১৪ হাজার ৪৩২ জন। এর মধ্যে মাঘান ইউনিয়নে রয়েছে ১ হাজার ৭৪ জন সুবিধাভোগী।
অভিযোগে ইউপি সদস্য শাহীন মিয়া উল্লেখ্য করেন ৩০/৪০ জনের পণ্য না দিয়ে ডিলার চলে যায়। চাল ও ডালে ওজনে কম দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমার ভাই আরজু মিয়া প্রতিবাদ করায় উল্টো তাকে মামলার ভয় দেখাচ্ছে প্রভাবশালী ডিলার। ডিলার নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছে। বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে চেয়ারম্যান সাহেবকে অবগত করেছি।
সুবিধাভোগী ৭নং ওয়ার্ডের সিদ্দিক,ওসমান গণি,মিজানুর,আলম মিয়া জানান, আমরা মঙ্গলবার সকালে টিসিবি পণ্য আনতে জয়বাংলা বাজারে যাই। ডিলার আমাদের পণ্য না দিয়েই চলে যায়। আমাদের মত আরও অনেকেই পণ্য না পেয়ে চিৎকার শুরু করলেও কোন কাজ হয়নি। এ সময় ট্যাগ অফিসার,চেয়ারম্যান,ইউপি সচিব উপস্থিত ছিলেন না। এই ডিলার সব সময়েই এমন কাজ করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ডিলারের প্রতিনিধি লুৎফর রহমান বলেন, শাহীন মেম্বারের ওয়ার্ডের মাল বিতরণ শেষে উনার ভাই আরজু মিয়া আমার নিকট ১০টি অতিরিক্ত পণ্য চান। পণ্য দিতে না পাড়ায় তারা আমাদের উপর হামলা করে । বিষয়টি আমি ডিলার নাসেরকে জানিয়েছি।
ডিলার নাসের তার মোবাইল ফোনে জানান, আমার প্রতিনিধি সঠিকভাবে বিতরণ কার্যক্রম শেষ করেছে। এর মধ্যে ৫নং ওয়ার্ডের ৬৫টি পণ্য ছিল। ৭নং ওয়ার্ডের মাল বিতরণের পর শাহীন মেম্বারের ভাই আরজু আমার লোকদের উপর অর্তর্কিত হামলা করে টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারকে মৌখিকভাবে অবগত করেছি। ট্যাগ অফিসার,চেয়ারম্যান,সচিব উপস্থিত থেকে পণ্য বিতরণ করেছেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান।
৫নং মাঘান ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মাসুদ জানান, মেম্বারের ভাই আরজু মিয়া এবং ডিলার প্রতিনিধির সাথে যে একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়ে ছিল তা সমাধান করে দেয়া হয়। এর পরেও মেম্বার কেন অভিযোগ করল তা আমি জানি না। কার্ড হয়নি,নতুন করে কার্ড করা হচ্ছে । অনলাইনের তালিকা দেখে পণ্য বিতরণ করায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে নুতন কার্ড বিতরণ হলে এ সমস্যা থাকবে না।
টিসিবি পণ্য বিতরণের সময় তিনি না গিয়ে পাঠান মোমেন নামে একজন সহকারী শিক্ষক এমন প্রশ্নে জবাবে ট্যাগ অফিসার আসাদুজ্জামান ( ইনস্ট্রাকটর ইউআরসি) জানান, আমার অনেক সময় কাজ থাকে। তাই যাওয়া হয় না। মাঝে মধ্যে সহকারী শিক্ষককে পাঠাই। ইউএনও মহোদয় এ বিষয়ে অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে কি না এ বিষয়েও তিনি জানেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্যাগ অফিসার বিতরণ কার্যক্রমে না গিয়ে সহকারী শিক্ষক পাঠান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তদন্তেই সব বেড়িয়ে আসবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন