নেত্রকোনার মদনে স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে আনসার সদস্য বিরুদ্ধে অভিযোগ

নেত্রকোনার মদনে আনসার ব্যাটালিয়ান সৈনিক মোমেন মিয়া ও তার বোন হারুনাসহ অজ্ঞতানামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্ত্রী জান্নাতুল আক্তার।
অভিযুক্ত মোমেন মিয়া আনসার ব্যাটালিয়ান সৈনিক পদে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় এজিবি ক্যাম্পে কর্মরত। সে উপজেলার কেশজানি গ্রামের নূরু মিয়া (হালান) মিয়ার ছেলে। এ দিকে জান্নাতুল মদন পৌরসভার মনোহরপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেম মিয়ার মেয়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জান্নাতুল এর বাবা মারা যাওয়ার পর পরেই তার মা ঝর্না আক্তার বাবার বাড়ি কেশজানি চলে আসেন। মোমেন মিয়ার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় দু’জনের মধ্যে পূর্বে থেকেই পরিচয় ছিল। সেই সূত্রে একজন অপর জনের সাথে কথাবার্তা হত। জান্নাতুল এর আগে রংপুরে সোহাগ মিয়া নামে এক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হয়েছিল। সেখানে তার সংসার ভালই চলছিল। মোমেন মিয়ার সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাধে প্রায় সময়েই জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলত। বাড়িতে আসলে জান্নাতুলকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিত মোমেন। মোমেন মিয়া জান্নাতুলকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। তার স্বামী সোহাগ মিয়া বিষয়টি জানতে পারায় তাদের মধ্যে শুরু হয় অশান্তি । এক পর্যায়ে সোহাগ জান্নাতুলকে তালাক দেয়। মোমেনের জন্য ভেঙে যায় জান্নাতুলের সাজানো সংসার। সংসার ভেঙে যাওয়ার খবর শুনে মোমেন জান্নাতুলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। নিরুপায় হয়ে মা ঝর্না আক্তার ব্যাটালিয়ান ক্যাম্পে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে নিলে ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং তারিখে মোমেন জান্নাতুলকে বিয়ে করে। কিছুদিন তার সাথে সংসার হয়। চাকুরী করার সুবাদে মোমেন তাকে ্নিজ বাড়ি রেখে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে মেনে নিতে না পারায় তার সাথে শুরু হয় ঝামেলা। এক পর্যায়ে মোমেনের বোন হারুনা,মা পারুলা ও ভাই মামুন শারীরিক নির্যাতন চালায় জান্নাতুলকে,এমনকি রুমের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। রাতে তাকে একা রেখে পরিবারের অন্য সদস্যরা অন্যত্র চলে যেত। এ দিকে তার স্বামী মোমেন জান্নাতুলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তাকে তালাক দিয়েছে বলে লোকমুখে প্রচার করছে বলে অভিযোগে জান্নাতুল উল্লেখ করেছে। এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জান্নাতুল বিষয়টি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করে।
জান্নাতুলের মা ঝর্না আক্তার জানায়, আমার স্বামী মারা গেছে । তাই বাচ্চাদের নিয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। আমার মেয়েটিকে রংপুরে সোহাগ নামে এক ছেলের নিকট বিয়ে দিয়েছিলাম। মোমেন আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সোাহাগ আমার মেয়েকে তালাক দেয়। মোমেন ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং তারিখে আমার মেয়েকে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুদিন তার সাথে ঘর সংসার করার পর তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই আমার মেয়ের উপর নানা ভাবে নির্যাতন শুরু হয়। আমার মোাবাইল ফোনে ফোন দিলে মোমেন মেয়েকে গালাগালি করে। আমার মেয়েকে তালাক দেবে বলেও হুমকি দেয়। বিষয়টি তার ক্যাস্পে জানানোর পরও কোন সুরাহা পাচ্ছি না। অবশেষে আমার মেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এখন শোনতেছি মোমেন নাকি আমার মেয়েকে তালাক দিয়েছে। আমি চাই মোমেন আমার মেয়েকে নিয়ে ঘর সংসার করুক।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার মোমেন মিয়ার গ্রামের বাড়িতে গেলে তার বড় দুই ভাই ও মা হারুলা আক্তারকে পাওয়া যায়। এ সময় তার বড় ভাই মামুন জানান, আমি জানি মোমেন তাকে তালাক দিয়েছে। বাড়িতে আপনারা জান্নাতুলকে নির্যাতন করেছেন খালি ঘরে একা রেখে রাতে চলে গেছেন,খাবার দেননি, আপনারা মারপিট করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সুদুত্তর দেননি।
এ বিষয়ে মোমেন মিয়া তার মোবাইল ফোনে জানান, তাঁর বয়স না হওয়ায় কোর্টের মাধ্যমে তাকে বিয়ে করে ছিলাম সংসার করার জন্য। আগে শুনছিলাম তার একটি বিয়ে হয়েছে সংসার করেনি। এখন জানতে পারি আমার ছাড়াও দুটি বিয়ে হয়েছে। তাকে ভাড়া বাসায় রেখে ছিলাম সেখানেও ভাড়া মালিককে না বলে ৩/৪ দিনের জন্য অন্য ছেলেদের সাথে চলে গিয়ে ছিল। এর পর বাড়িতে নিয়ে আসলেও আমার ভাই বোনের সাথে ঝগড়া করে তার বাড়িতে চলে গেছে। এ থেকেই সে ও তার মা আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়ে অবশেষে তালাকের একটি নোটিশ পাঠিয়েছি।
মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, এ বিষয়ে আদালতে মামলা করার জন্য পরার্মশ দেয়া হয়েছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন