নড়াইলের মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ

নড়াইলের মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন
কালনা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নড়াইলের কালনা সেতু। এই লক্ষ্য নিয়ে বিরামহীনভাবে এগিয়ে চলছে ছয় লেনের কালনা সেতু নির্মাণকাজ। মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু।

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, গত মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে মাত্র চার দিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান কালনা সেতু নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। সেতুর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি কালনা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন। এ সময় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। সেতুর পূর্ব পড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।

সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। বর্ষায় পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং নদীর মাঝখানে সেতুতে যান চলাচলের জন্য ১৫০ মিটার ফাঁকা থাকছে। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তখন থেকে ৩৬ মাস অর্থাৎ ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ছিল মেয়াদ কাল।
এ সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান জানিয়েছেন, এ সেতুর সার্বিক কাজ হয়েছে ৭২ ভাগ। সংযোগ সড়কের কাজ শেষের পথে। মুল সেতুর দুটি স্প্যান বসানোর কাজ বাকি আছে, এ দুটি বসানো হলে গাড়ি চালানো যাবে।

সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সেতুর কাজ পরিদর্শন করেছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৩০ জুন থেকে এ সেতুতে গাড়ি চালানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে। কারণ জুনেই পদ্মা সেতু চালু হবে। গাড়ি চললেও কিছু কাজ বাকি থাকবে। তা ৩০ জুনের পর করা হবে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।

সরেজমিনে গিয়ে ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং শুরু হয়েছে ও পশ্চিমপাড়ে পাথর-বালুর ঢালাইয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। আটটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। কাশিয়ানী পাশে ডিজিটাল টোলপ্লাজা নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। তৈরি করেছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। এটিই ছিল সেতুর সবচেয়ে বড় কাজ, তা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ওই স্প্যানটির উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কনক্রিট)। মোট ১৩টি স্প্যানের মধ্যে পিসি গার্ডারের দুটি স্প্যানের কাজ বাকি আছে।

এই সেতু চালু হলে উভয়পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটি এই এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু। এখানে সেতুর দাবিতে বহু আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনী জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একই ভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।