নয়াপল্টনের ঘটনায় ইসিতে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নয়াপল্টনের ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী ঘটনা ঘটেছিল সেটা জানতে চেয়ে আমরা ১৮ নভেম্বরের ভেতরে পুলিশ মহাপরিদর্শককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ প্রধানের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ইসিতে দিয়ে গেছেন। তবে যেহেতু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বরাবর প্রতিবেদনটি দিয়ে গেছে সেহেতু প্রতিবেদনটি আমি খুলিনি। সোমবার সকালে মাননীয় সিইসির কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেব।’
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আসলে জানতে চেয়েছিল কার কী দোষ। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে নাকি বিএনপির অতি উৎসাহী কর্মীরা ঘটনার সূত্রপাত করেছে বিষয়টি কমিশন জানতে চেয়েছিল। এছাড়াও কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত, কেন পুলিশ সেখানে গেল, বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন পুলিশকে উদ্দেশ করে হামলা করলো অথবা কেন গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলো এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছিলাম। তদন্ত প্রতিবেদনটি আমরা হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনটি মাননীয় কমিশনাররা দেখবেন আগে। তারপর ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন তারা।’
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছিলেন, ‘নয়াপল্টনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।’
কবিতা খানম আরো বলেছিলেন, ‘প্রথমে পুলিশ পুরো বিষয়টির তদন্ত করবে। তারপর কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা-সমালোনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
গত ১৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি। সেই মনোনয়ন নিতে সকাল থেকে মিছিল-ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিপুল সংখ্যক সমর্থক।
এদিকে, সকাল থেকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে ছিলেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তাঁরা যানবাহন চলাচলের জায়গা করে দিতে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১টার পর নয়াপল্টনের সামনের রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন নেতাকর্মীরাও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশ সাঁজোয়া যান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। মাঝেমধ্যে গুলির শব্দ শোনা যায়। নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয়। পরে এই ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় তিনটি মামলা করে পুলিশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন