নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা পরিকল্পিত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচন বানচালের জন্য নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা ও গাড়ি পোড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা পরিকল্পিতভাবে হয়েছে। যখন দেশ একটি সুন্দর নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যখন সিডিউল ঘোষণা করেছে, মানুষ যখন একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেই সময়ে এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা মনে করি নাশকতা তৈরি করে, ধূম্রজাল সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের একটা অপচেষ্টা এটা। পুলিশের ওপর হঠাৎ আক্রমণ সেটাই মনে করিয়ে দেয়।’
‘এ ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সবাই যখন নির্বাচনের জন্য উন্মুখ তখনই এ ঘটনা ঘটলো। স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে এটা উদ্দেশ্যমূলক, এটা নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে ১৩ পুলিশ ও তিন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের দুটি নতুন গাড়ি তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একটি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার-সাজোয়া যান) ভেহিক্যাল সেখানে ছিল, সেই এপিসি ভেহিক্যালেও তারা আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। পুলিশ সক্রিয় থাকায় এপিসি ভেহিক্যালটা রক্ষা পায়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নয়া পল্টনে বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও মেজর আকতার আসছিলেন মনোনয়ন পেপার সাবমিট করতে। এ সময়ে উত্তেজনা দেখা দেয়, উত্তেজনার এক পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি। পুলিশ আগে থেকেই বলেছিল যে, সেখানকার (নয়া পল্টনের) দুটি রাস্তার একটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে। তারা সম্পূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে এ দুই গ্রুপ ও অন্যান্য গ্রুপরা এসে অবস্থান করছিল।’
‘পুলিশ খেয়াল করে ওখানে উত্তেজনা সৃষ্টি ও ধাক্কাধাক্কি ও অসহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এরপর দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের ওপরে তারা ইট পাটকেল ছোড়া শুরু করে। যখন পুলিশ বলছিল, দুই রাস্তার একটি খুলে দেয়ার জন্য। সেই সময় একটা ধাক্কাধাক্কি ও পুলিশের ওপর আক্রমণ আপনারা সবাই লক্ষ্য করেছেন।’
ধানমন্ডিতেও আওয়ামী লীগ অফিসে মনোনয়ন প্রার্থীদের কারণে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, নয়াপল্টনে কেন নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ, আর ধানমন্ডিরটা বাইলেন, একটা রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় ঢোকার জন্য সেই রাস্তা। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেই রাস্তাটিও খালি রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ধরনের পরিস্থিতি করে সরকার নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে।’
মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে যা আছে, সাধারণ মানুষ যা দেখেছে- আমি সেটারই বর্ণনা করেছি। বিএনপি নেতা কী বলেছেন সেগুলোকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে চাই না। আমাদের পুলিশ তাদের (বিএনপি) নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই সেখানে অবস্থান করছিল। তারা (পুলিশ) আগেভাগে কিছুই করেনি। দুই নেতা যখন ঢুকলেন তখনই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
‘পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেছে, পুলিশ মার খেয়েছে। পুলিশের মারমুখী আচরণ ছিল না। মারমুখী আচরণ থাকলে ১৬ পুলিশ আহত হত না। আমরা মনে করি পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এবং আহত হয়েছেন’- বলেন আসাদুজ্জামান খান।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ তৈরি আছে বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কোনো রাজনৈতিক মামলা রুজু করেনি, ভাঙচুর কিংবা বাধা প্রদান কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শন কিংবা আইসিটি অ্যাক্টের মামলা এখানে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জোট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় একটা লিস্টও দিয়েছেন। সেই লিস্টটা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি যদি তাদের কথার সত্যতা আমরা পাই তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমরা অলরেডি কাজ শুরু করেছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন