পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক অফিসেই বারো বছর, দুর্নীতির অভিযোগ কবিরের বিরুদ্ধে


পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এক অফিসেই বারো বছর ধরে চাকরি করে আসছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসাইন। সাস্প্রতিক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে যোগসাজসের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনসহ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানানো হয়।
এছাড়া ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক পঞ্চগড় বরাবরে কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন তেঁতুলিয়া উপজেলাবাসীর পক্ষে সুধি সমাজ জাকির হোসেন নামের এক স্বাক্ষরকারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কবির হোসাইন কোনো বিল ভাউচার ছাড়াই সরকারি রাজস্ব তহবিল থেকে ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এরপর তার (কবির) যোগসাজসে প্রাক্তন ইউএনও ফজলে রাব্বি নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে গত বছরের ২৭ আগস্ট উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিল থেকে পৃথক দুটি চেকের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৫ টাকা উত্তোলন করে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলার ডাকবাংলো পিকনিক স্পোটের উত্তোলনকৃত টাকা কেয়ারটেকারের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে জমা না করিয়ে স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসাইনের পকেটে নেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে কবির হোসাইনের সহযোগিতায় প্রাক্তন ইউএনও ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দপ্তরের মালামাল ভাঙচুর দেখিয়ে যেমন, উপজেলা সরকারি স্টেডিয়ামের চেয়ার-টেবিল ও সোফা, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এর চেয়ার, বেরং কমপ্লেক্স এর টিভি, ফ্রিজ ও আইপিএস রাতের আধারে পিকআপে করে তার (ফজলে রাব্বি) গ্রামের বাসায় নিয়ে যান।
এছাড়া উপজেলা হলরুমের বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করে মডেল মসজিদের চেয়ার হলরুমে নিয়ে আসা হয়। এরপর হাটবাজার উন্নয়ন তহবিল ও রাজস্ব তহবিলের টাকা এবং এডিবি রাজস্ব ফান্ড থেকে ভুয়া পিআইসির মাধ্যমে সাজানো প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে লুটপাট করছেন কবির হোসাইন। কবির হোসাইন প্রাক্তন ইউএনও’র দাপোট দেখিয়ে সাধারন উপকার ভোগীদের দুরব্যবহার ও বৈষম্য মূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
আরও জানা যায়, কবির হোসাইন উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে এলজিএসপি প্রকল্পের শিক্ষা উপকরণের কথা বলে ২লাখ টাকা করে গ্রহন করেন। কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে তা বিতরণ হলেও বেশির ভাগ ইউনিয়নে এখনো বিতরণ করা হয়নি। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা সুধী সমাজ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কবির হোসাইনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসাইন গত ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর উপজেলা পরিষদে যোগদান করেন। জানা যায়, যোগদানের পর থেকেই তাকে কোনো বদলী করা হয়নি। বহাল তবিয়তে একই অফিসে বারো বছরের বেশি চাকরি করে আসছেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি পরিবীক্ষণ অধিশাখা কর্তৃক পরিপত্র সূত্রে জানা যায়, ‘ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের সাধারন ও রাজস্ব প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মচারীদের একই পদে কিংবা একই কর্মস্থলে তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সাধারণত অন্যত্র বদলি করার রেওয়াজ রয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, একই পদে তিন বছরের অধিককাল কর্মরত থাকায় কোন কোন কর্মচারী অধিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন, অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া একই পদে তিন বছরের অধিককাল কর্মরত থাকায় কোন কোন কর্মচারী বিভিন্ন অনিয়মের সঙে জড়িয়ে পড়ছেন।
এ জন্য মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং একই পদে কিংবা কর্মস্থলে তিন বছরের অধিককাল সময় ধরে কর্মরত কর্মচারীদের অবস্থাভেদে বদলীর নির্দেশান দেওয়া হয়েছে।’ পরিপত্রে এমন নির্দেশনা থাকলেও কবির হোসাইনের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনার ছিটেফোটাও পড়েনি।
অভিযোগকারীর নিদির্ষ্ট ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর না থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসাইন বলেন, দাপ্তরিক শত্রুতার কারণে এসব করা হচ্ছে। একজন অফিস সহকারীর স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছুই না। আগের ইউএনও আপ্যায়ন বিল, টিনের বিল কখন কি পরিমান টাকা উত্তোলন করে ব্যয় করছেন সেখানে আমাকে জড়িয়ে লাভ আছে। এটা মূলত দাপ্তরিক শত্রুতা। আমি যখন এসব অনিয়ম করেছি তখন তারা ধরলো না কেন?
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। আগের ইউএনও’র সময় কি হয়েছে এসব বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে কবির হোসাইনের বিষয়ে ফেসবুক লিংক তার হোয়াটসঅ্যাপে দেয়া হলে পরবর্তীতে লিংকটি ওপেন হচ্ছেনা জানান তিনি।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন