পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খাস জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকৃত খাস জমি জবরদখল করার পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। পূণরায় গত সোমবার (৩ জুন) আদালত থেকে বাড়িতে ফিরেই তেঁতুলিয়া থানার এফআইআর ১২ ও জিআর ২০১ নং মামলার আসামী আবুল হোসেন গংরা খাস জমি দখলে অবস্থান নেন। পরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিক উপস্থিত হলে আবুল হোসেনরা বাড়িতে ফিরে আসেন।

জানা যায়, উপজেলার ঝারবাড়ী মৌজার জে.এল নং ৩১ এর খাস খতিয়ান ১ হতে ব্রহ্মতোল গ্রামের ফারাজ উদ্দিনের ছেলে হাইবুল হক ও তার স্ত্রী আলতাফুন বেগম গত ২০০৯ ইং সনের এপ্রিল মাসের ২২ তারিখে ১১০৯ নং বন্দোবস্ত দলিলমূলে এস.এ ৪১৯১ নং দাগে ৩০শতক, এস.এ ৪২৪৯ নং দাগে ১০শতক, এস.এ ৪২৯১ নং দাগে ২০শতক, এস.এ ৪৩৭৮ নং দাগে ১০শতক, এস.এ ৪৩৭৭ নং দাগে ০৮শতক, এস.এ ৪৩৮২ নং দাগে ০৯শতক, এস.এ ৪৪৮৫ নং
দাগে ০৫শতক এবং এস.এ ৪৭৩৬ নং দাগে ০৭শতক মোট ৮ দাগে ৯৯শতক জমি তাদের নিজ নামে ৭৭৮নং খারিজ খতিয়ান খোলার পর বর্তমান বিএস জরিপে খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) খতিয়ান প্রস্তুত করে নেন।

বর্ণিত বন্দোবন্ত খাস জমির শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে হাইবুল হক দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন। সাম্প্রতিক ৬/৭মাস আগে একই গ্রামের মৃত বাজারু মোহাম্মদের ছেলে আবুল হোসেন গংরা হাইবুল হকের বন্দোবন্তকৃত জমি জবর দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন। এতে হাইবুল হক মারপিটের হুমকির ভয়ভীতিতে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপর একপর্যায় মারপিটের ঘটনা ঘটলে উভয়পক্ষের মধ্যে ফৌজদারী মামলা হয়। অসহায় গরীব হাইবুল হক উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের স্মরণাপন্ন হোন। হাইবুল হক বাদী হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৯ ও ১৮ তারিখে আবুল হোসেনসহ ৫জনের বিরুদ্ধে খাস জমি চাষাবাদে বাধাগ্রস্থ এবং খারিজ বাতিলের দুটি পৃথক আবেদন করেন।

আরোও জানা যায়, উপজেলা সহকারী কমিশার (ভূমি) এর আবেদনের শুনানীর নোটিশ পাওয়ার পরেও বিবাদী আবুল হোসেন গংরা শুনানীতে উপস্থিত হচ্ছেননা। হাইবুল হক বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বন্দোবন্তকৃত খাস জমি ভোগদখল করে আসছেন। হঠাৎ আবুল হোসেন গংরা তার জমি জবর দখল করার পাঁয়তার শুরু করছেন। তাদের বন্দোবস্তকৃত খাস জমিগুলোতে গেলেই গোটা পরিবারকে তাঁরা(আবুল হোসেনগংরা) মেরে ফেলবে আশঙ্কায় রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে ওই জমি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ আবুল হোসেন গংরা তাদের সরকারের কাছ থেকে নেওয়া জমিগুলো ফেলে রেখেছে। তিনি এ বিষয়ে সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে আবুল হোসেন বলেন, ওই জমিগুলো তাদের। তারা সরকারের ওপর মামলা করে জমির রায় নিয়েছেন। এই জমি সরকার নিতে পারবেনা। হাইবুলকে মারপিট ও মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসায়

তিনি বলেন, সে কোন মামলা করেন নাই উল্টো হাইবুলকে দোষারোপ করেন। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকে গ্রাম আদালতে ডাকা হলে কেউ কারো কথা মেনে না নেওয়ায় সালিশ করা সম্ভব হয়নি।

খাস জমি ও দখল বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল গণির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এসিল্যান্ড মহোদয়ের পত্র প্রাপ্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে জানতে ও দেখতে পান অভিযোগে বর্ণিত জমি হাইবুল হক দখলে আছেন এবং জমিগুলো ১নং খতিয়ানের। বিবাদীপক্ষ আবুল হোসেন গংরা তাকে (হাইবুলকে) বাধা প্রদান করে আসছেন।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘তিনি বিবাদীপক্ষকে একাধিকবার নোটিশ করলে বিবাদীপক্ষরা উপস্থিত হচ্ছেননা, তাদের কি কাগজপত্র রয়েছে দেখতে শেষ বারের মতো নোটিশের শুনানী আগামী ১০ জুন ধার্য্য করা হয়েছে। যদি সেদিন তাঁরা (বিবাদীপক্ষরা) উপস্থিত না হোন একতরফা আদেশ দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানানো হয়েছে।