পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় রাস্তা নির্মাণে বালুর বদলে মাটি, সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী থেকে সিপাইপাড়া ইউনিয়নের হাজিপাড়া পর্যন্ত ইউনি ব্লক সড়ক নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নির্মাণকাজে বালুর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট।

গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালের দিকে ওই রাস্তায় যাওয়া মাত্রই সাংবাদিকের দিকে ত্যাড়ে এসে ছবি তুলতে বাধা প্রদান করেন ঠিকাদার কর্তৃক নিয়োজিত মিস্ত্রি রায়হান। এসময় সাংবাদিকদের অনুমতি ছাড়াই ভিডিও ধারন করেন ঠিকাদারের ম্যানেজার ওমর ফারুক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার সাব বেইজে বালুর পরিবর্তে মেশানো হচ্ছে মাটি। সাব বেইজে অর্ধেক খোয়া আর অর্ধেক বালু দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। এছাড়া সাব গ্রেডেও বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সাইটে থাকা ম্যানেজার আধাঘন্টা পর অনেক জল্পনা-কল্পনায় বালু নিয়ে আসলে সেটিতেও বালুর সঙ্গে মাটি মেশানো ছিল। উপস্থিত কার্যসহকারী সে বালু রাস্তার উপর ফেলা মাত্রই রিজেক্ট করে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এমন অনিয়মের ঘটনায় কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়।

উপজেলা প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে তিরনইহাট ইউনিয়নের গুয়াবাড়ী থেকে সিপাইপাড়া ইউনিয়নের হাজিপাড়া পর্যন্ত ৬হাজার ২১০ মিটার ইউনি ব্লক সড়ক নির্মাণে চুক্তিমূল্য ১১ কোটি ৯৮লাখ ৭৫ হাজার ১৯২ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ জেলা শহরের ভুতের গলি মো. মিজানুর রহমান।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান। আরও জানা যায়, দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন তানিয়া কনস্ট্রাকশন, ঠাকুরগাঁও। যার স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন মো. আব্দুস সামাদ। বর্তমানে আব্দুস সামাদ কাজটি করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রতিবেদককে বলেন, রাস্তার ধুলো বালিতে এলাকাবাসীর অনেক অসুবিধা হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন রাস্তায় কোনো পানি দেয়নি। তার সঙ্গে রাস্তায় পানি দেয়া নিয়ে যুক্তি করলে পরে আর কোনো কথা বলেনি।

এ বিষয়ে সিপাইপাড়া ইউনিয়নের ফুটকীবাড়ী গ্রামের আজিজুল হক, রুপি বেগম, আজিব উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ ও নারায়নজোত গ্রামের আশিক এবং গুয়াবাড়ী গ্রামের মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঠিকাদার গত বর্ষার আগ থেকেই এই রাস্তার মাটি কেটে রাখেন। এখন নতুন করে কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি। কিন্তু এটা কী দেখছি আমরা। আগে কাদামাটি ঠেলে যাতায়াত করেছি। এখন যে রাস্তা হচ্ছে, বালুর পরিবর্তে মাটি ফেলানো হচ্ছে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আগের মাটিগুলো কিছু সরিয়ে নিলেও এখন আবারো বালুতে মেশানো হচ্ছে মাটি। তারা আরও বলেন, রাস্তায় যে খোয়া ব্যবহার হচ্ছে তা নি¤œমানের ইট দিয়ে। রাস্তার কাজ ভালোভাবে করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে সরেজমিনে গেলে সড়ক নির্মাণ কাজের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সাইড ম্যানেজার ওমর ফারুকের কাছ থেকে বালু ও ইটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেগুলো মাটি ছিল তা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

জেলা-উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার স্যার আসছিলেন তারা দেখছেন ইট ভালো মানের। এছাড়া ইট টেস্ট করা হয়েছে। আপনি এই ব্যাপারে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এরপর গত ৯ এপ্রিল বুধবার সরেজমিনে গেলে রাস্তার কাজে বালুর সঙ্গে মাটি মিশ্রিত দেখতে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে যখন বলা হয়েছিল তখন মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন মাটি ফেলা হচ্ছে কিনা তা জানিনা। তবে তেঁতুলিয়ায় মোটা বালি তাই কমপ্যাকশনের জন্য চিকন বালি দরকার। চিকন বালিই মাটির মতো দেখায়। কিন্তু চিকন বালির সঙ্গে কাদা নিয়ে আসা হচ্ছে এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

ইটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট গুলো বগুড়া থেকে নেওয়া হচ্ছে ইট হলুদে দেখা গেলেও মান ভালো। ইট টেস্ট করা হয়েছে। সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সাংবাদিক ছবি তুলবে এতে বাধা দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় থেকে দায়িত্বে থাকা ওই রাস্তার কার্যসহকারী রাহুল সাব বেইজের কাজে বালুর সঙ্গে মাটি মিশ্রিত এবং বালুর পরিবর্তে মাটি নিয়ে আসা অতঃপর সেই মাটি রিজেক্ট করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী খাঁন বলেন, এর আগে স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং নির্মাণ কাজে বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারের সত্যতা পাই। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ মাটি অপসারণ না করা পর্যন্ত রাস্তা কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয় ঠিকাদারকে।

এরপর (১৯ এপ্রিল) রাস্তার কাজে বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে কাজের বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেননা। জানতে পেরেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের ছবি তুলতে ঠিকাদারের লোক বাধা দেয়ায় ঠিকাদার এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।

এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।