পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসেন সাইজ করে ফেলব’ জনতা ব্যাংকের ম্যানেজারকে ইউপি সদস্য জামিল

‘আসেন আপনি তেঁতুলিয়ায় আসেন সাইজ করে ফেলব, আমার কাছে এমডির নম্বর আছে’ মুঠোফোনে এসব কথাসহ আরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল ইসলামকে হুমকি দিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামিল হোসেন।
গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শাখার ব্যবস্থাপককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দুই ইউপি সদস্য অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার রনচন্ডি এলাকার তফেজর রহমানের ছেলে জামিল হোসেন ও সরকারপাড়া এলাকার রহমত আলীর ছেলে নুর ইসলাম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জামিল হোসেনের স্ত্রী মোছা. রেনু বেগমের দায়দেনা সম্পর্কিত একটি ‘দায়মুক্ত’ প্রত্যয়ন নিতে তার বড় ভাই ব্যাংকে আসেন। ব্যাংক ব্যবস্থাপক(ম্যানেজার) রেনু বেগমের বড় ভাইকে জানান, রেনু বেগমের নামে ঋণ খেলাপি রয়েছে, তাই দায়মুক্ত প্রত্যয়ন দেওয়া সম্ভব নয় এ কথা বলার পরেও রেনু বেগমের নামে কোনো দায়দেনা নেই মর্মে প্রত্যয়ন দিতে বলেন।
প্রত্যয়ন দিতে না চাইলে রেন বেগমের বড় ব্যাংক থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর রেনু বেগমের স্বামী অভিযুক্ত জামিল হোসেন মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তেঁতুলিয়ায় গেলে হত্যার হুমকি দেন। পরে অভিযুক্ত জামিল এর মুঠোফোন থেকে অভিযুক্ত নুর ইসলাম গালিগালাজ করেন।
মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ড করা আছে। অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, জামিল হোসেন গত ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি গাভী পালন খাত উন্নয়নে দুগ্ধবতী গাভী পালন কর্মসূচির আওতায় মাসিক ৩হাজার টাকা জমাদান শর্তে ৩৬ মাস মেয়াদের ৯০ হাজার টাকার ঋণ নেন। কয়েকটি কিস্তির পর কোনো কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণটি খেলাপি হয়।
পরে ওই ব্যাংকের সিসি গ্রাহক আব্দুর রাজ্জাকের মধ্যস্থতায় ঋণটি পরিশোধ করে চলতি বছরের ২৮ মে তার স্ত্রী মোছাঃ রেনু বেগম নামে গ্রামীণ নারী কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় মাসিক আড়াই হাজার টাকা জমাদান শর্তে ১৮ মাস মেয়াদে ৪০ হাজার টাকার আরেকটি ঋণ নেন, যা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে জামিল হোসেনের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩৭ হাজার ৭৫৬ টাকা ৫৬পয়সা জনতা ব্যাংক পাওয়াদার রয়েছেন।
জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, জামিল হোসেনের সম্বন্ধী রেনু বেগমের দায়দেনা অনাপত্তি সনদ নিতে আসেন। জামিল হোসেন আগেও ঋণ খেলাপি ছিলেন। পরে মধ্যস্থতায় ঋণ পরিশোধ হলেও এখন তার স্ত্রীর নামে নেওয়া নতুন ঋণটিও খেলাপি হয়েছে। জামিন হোসেন উইলফুল ডিফল্টার।
এ কারণেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে দায়মুক্ত প্রত্যয়ন দেওয়ার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না এবং দায়দেনা অনাপত্তি সনদ না দেওয়ায় ব্যবস্থাপককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি ঘটনাটি শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন এবং থানায় অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. জামিল হোসেন বলেন, দুই সম্বন্ধী, তার স্ত্রী ও শ^াশুড়ির নামে তার শ^শুড় জমি রেজিস্ট্রি করেছিল। ওরা কৃষি ব্যাংকে লোন করবে তাই দায়দেনা প্রত্যয়ন নিতে গেলে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার রেনু বেগম ব্যতিত তিনজনের নামে দায়দেনা প্রত্যয়ন নেওয়া যাবে জানান। ম্যানেজার রেনু বেগমের দায়দেনা প্রত্যয়ন দিতে পারবেনা তিনি জানতেন।
এদিকে ম্যানেজার তার স্ত্রীর দায়দেনা প্রত্যয়ন তো দেয়নি সে তার সম্বন্ধীর কাছে এমন ব্যবহার করেছে শুনলে অবাক হওয়ার মতো। ম্যানেজার সম্বন্ধীকে বলেন, আপনারা কেমন প্রতিনিধি বানান ১০০টাকা দিলেই ভোট দিয়ে দেন, ওরা সমাজের কালপিট।
আপনি যে হুমকি দিছেন এটা তো সত্য তাই না জিজ্ঞাসা করার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি হুমকি কেন, পাইলে লাতথাইতাম (লাতিমারতাম) ওই মুহুর্তে, হুমকি শুধু না আপনাক(সাংবাদিককে) বলতেছি এখনো। ওই মুহুর্তে পাইতাম যে কথাগুলো বলছে জানেন একজন ম্যানেজার হিসেবে হুমকি তো দুরের কথা আমি লাতথাইতাম (লাতিমারতাম) ওই মুহুর্তে পাইলে সামনে। কি বলবো ভাই এখনো বলি। গালি দিছি যা ইচ্ছা হয়।’
অপর ইউপি সদস্য মোঃ নুর ইসলাম বলেন, ‘উনার কাছে রেকর্ড আছে আপনি(সাংবাদিক) শুনবেন। আমি যে কয়েকটা কথা বলছি আমার একটা কথাও হুমকির মধ্যে আসেনা তবে জামিল ম্যানেজারের কাছে যে ব্যবহারটা খারাপ করছে আমি জামিলকে থ্রেট করছি, উনি(ম্যানেজার) কি বলে বলুক তোমার এটা বলা ঠিক হয়নি।’
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। কেউ তাকে জানাননি তবে জানা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মুসা মিয়া বলেন, জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল ইসলাম থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি প্রসিকিউশন মামলায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তিনি দু’জন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে জানেন। তবে কোন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ হয়েছে তা তিনি অবগত নন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















