হারাদিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, তদন্ত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার হারাদিঘী দ্বি-মুখীসউচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ফিরোজের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন ভঙ্গসহসনানা অনিয়মের গণ অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা।চলতি বছরের গত ২৭ মে জেলা শিক্ষা অফিসার পঞ্চগড়ের কাছে এই অভিযোগটি দায়ের করা হয়।

অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল মালেক শনিবার (১৩ জুলাই) বিকাল ৩টায় ওই বিদ্যালয়ে তদন্তে আসেন। এতে অভিযোগকারীর পক্ষে ওই বিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়া সহকারী শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষককে একই টেবিলে বসিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা চলে তদন্তের কার্যক্রম।

এ সময় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র প্রফেসর মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রধান, হারাদিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মহিম উদ্দিন, নীলফামারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হাজেরুল ইসলামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, অভিভাবকবৃন্দ ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত সালের জুন মাসের ১৮ তারিখ জেনারেল মিটিং এর জন্য ১৫৪ জনের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন ওই বিদ্যালয়ে দেয়া হলে প্রধান শিক্ষক সেই আবেদনটি ওই মাসের ২১ তারিখ গ্রহন করেন। কিন্তু কোন জেনারেল মিটিং না দেয়ায় এবং বিদ্যালয় প্রধান তার রামগতিতে নানান অনিয়ম আর দুর্নীতি করার কারণে এই অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দুদকের সততা স্টোরের টাকা আত্মসাৎ, গত সালের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৬৪জন ছাত্র-ছাত্রীকে উপবৃত্তি দেওয়ার নামে প্রতি জনের কাছ থেকে ১৫০টাকা ও অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ১০দিনের জন্য ২০টাকা করে আদায় করেন, বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী আক্তারকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়মবর্হিভুতভাবে দুই বছর দেওয়া ও তার হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষক নিজেই স্বাক্ষর করা, এসএসসি পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে ৫০০টাকা করে নেয়া, এডহক কমিটি না দিয়ে খেয়াল খুশি মতো চলাসহ ১০টি কারণ উল্লেখ করে বিদ্যালয় প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করা হয়।

তদন্তকালে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম থাকলেও অকেজোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে কম্পিউটার। এতে কম্পিউটার ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক। বসে বসে সরকারের বেতন খাচ্ছেন কম্পিউটার শিক্ষক। এদিকে যেকোনো কাজে এবং ছাত্র- ছাত্রীদের ইউনিক আইডি কার্ডের অজুহাতে আদায় করা হয়েছে প্রতিজনের কাছ থেকে ১৫০টাকা করে। অন্যদিকে শিউলী আক্তারকে তার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে শিলাইকুঠি এলাকার শাহজাহান নামে এক ব্যক্তিকে প্রক্সি হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে দুই বছর ছুটি কাটেনি জানিয়েছেন শিউলী আক্তার। এছাড়াও চলমান কমিটি থাকাকালীন সময়ে কিভাবে এলাকাবাসীর অজান্তে সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলামকে শুক্রবারের দিন মসজিদে নামায পড়ার সময়ে অফিস পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অভিযোগ উঠছে। এরপর এডহক কমিটি না দেয়া নিয়েও অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এদিকে দুদকের সততা স্টোরের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি বিদ্যালয়টিতে। তবে দুদকের সততা স্টোরের ৩০হাজার টাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭হাজার টাকা অবশিষ্ঠ রেখে বাকি টাকা খরচ করা হয়েছে মৌখিকভাবে জানতে পারা গেছে। প্রশংসাপত্র ও সনদপত্র বিতরণেও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে একঘেয়ামি টাকা।

এলাকাবাসী রিয়াজ উদ্দিন ঠান্ডু বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভরপুর। কখন কি পরীক্ষা নেয় বুঝা বড় দায়। প্রবেশপত্রে নেই প্রধানের স্বাক্ষর, নেই সাল, নেই কোন পরীক্ষার নাম লেখা অথচ নেয়া হচ্ছে পরীক্ষা। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পরীক্ষা ফি, সেশন ফি আদায়কালে কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছেনা। একই কথা জানিয়েছেন অনেকেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষা-দীক্ষার উন্নয়নে ও অনিয়মের বিরুদ্ধে উদ্যোগ গ্রহনকারী ওই বিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়া গিয়াস উদ্দিন বলেন, তার আবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের বাহিরেও আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে যেদিন থেকে শাহজাহান ফিরোজ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তার পর থেকেই বিদ্যালয়ে অনিয়ম হওয়া শুরু হয়েছে। গোপনে সভাপতির ছেলেকে নিয়োগ, কেউ জানেনা। কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সেটিও নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়নি। অনেকেই আবেদন করতে চাইলেও আবেদন করতে পারেনি। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজে সরকার ৫লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন অথচ সে নিজেই নামে মাত্র রংয়ের কাজ করে টাকা লোপাট করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যতা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান মোঃ শাহজাহান ফিরোজ বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। প্রতিটি অভিযোগের বিপক্ষে তার কাছে প্রমাণ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, তিনি সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে ১ম পক্ষ, ২য় পক্ষ, এলাকাবাসীর ও অভিভাবকদের কাছ থেকে জেনেছেন। আরও জানার রয়েছে জানিয়ছেন। উভয়পক্ষকে যার যার মতো প্রমাণ্য উপস্থাপন করতে তিন দিনের সময় দিয়েছেন। এরপর উর্ধ্বতর কর্তৃপক্ষের নিকট পরামর্শক্রমে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।