পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তিন লাখ টাকা মূল্যের গাছ জব্দ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বিরোধপূর্ণ জমি থেকে ৩ লাখ টাকা মূল্যের ইউক্যালিপ্টাস গাছের ২১৭পিস লক জব্দ করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের ১০০ গজ পশ্চিমে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন উত্তর পার্শে মাগুরমারী চৌরাস্তা নামক এলাকায় এই জব্দের ঘটনাটি ঘটে।
রোববার (২৮ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত চলে জব্দের কার্যক্রম। জব্দকৃত লক গুলো দেবনগড় ইউনিয়ন ভূমি অফিস
চত্বরে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, কারফিউ চলাকালীন ও তার দু’একদিন আগে ওই জব্দকৃত গাছ গুলো কাটেন উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের উষাপাড়া গ্রামের নবিবর রহমানের ছেলে মনিরুজ্জামান মিন্টু।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পরিষদ কর্তৃক বিরোধপূর্ণ জমিতে গাছ কেটে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পেয়ে গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকালের দিকে দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান, আনসার ও পুলিশ সদস্য।
বিরোধপূর্ণ গাছ গুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসার জব্দের নির্দেশ দেয়।
এসময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী, ইউপি সদস্যগণ, সাংবাদিক বৃন্দ, গ্রাম পুলিশ, মনিরুজ্জামান মিন্টু ও নুর আলমসহ আরো অনেকেই পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আমজুয়ানী মৌজার জে.এল.নং ২৮ এর এস.এ ৭৫৪ নং খতিয়নের ৪৫৬৩ নং দাগে ৯৬শতক জমির মধ্যে ৫০শতক জমি গত ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ সতরমগছ গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে হাফিজ উদ্দিন ও মফিজ উদ্দিনের কাছ থেকে ৭৪৪নং দলিল মূলে ক্রয় করেন ৭নং দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই খতিয়ানের অন্যতম রেকর্ডীয় মালিক সলিম উদ্দিন তার বারো আনা হিস্যা মতে হাফিজ উদ্দিন ও মফিজ উদ্দিনের কাছে কবলা দলিলে বিক্রি করেন। পরিষদ জমি ক্রয়ের পর ১৯৮৬ সালের ১১ জানুয়ারি দুই দলিলে ৪টি দাগে এক একর জমির ৮৩৮ নং খারিজ খতিয়ান খুলে নেয়।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই মৌজায় একই জে.এল নং এর এস.এ ৭৫৪ নং খতিয়ানের ৪৫৬৩ নং দাগে ৯৬ শতক জমির মধ্যে ৪১শতক জমির আরও একটি ৯৫০ নং খারিজ খতিয়ান হয়। এই খতিয়ানটি হাওয়াজোত গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে তৈয়বুল হোসেনের নামে দেখা গেছে। দাগটিতে দুটি খারিজ খতিয়ান সৃজন হওয়ার পর ৫শতক জমি অবশিষ্ট রয়েছে। তবে বর্তমানে দখলকৃত কোন ব্যক্তি ওই খারিজ খতিয়ান দুটিকে বাতিল করতে পারেনি।
সরেজমিনে গিয়ে আরও জানতে পারা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ দাবিদার বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে ৬৩টি ইউক্যালিপ্টাস গাছ কাটা হয়েছে। সেকশন করার পর ওই গাছগুলোর ২১৭টি লক ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জব্দ দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ১টি লক হায়দারের করাত মিলে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভজনপুর গাছ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, তিনি ৩লাখ ২০হাজার টাকায় গাছ গুলো ক্রয় করেছেন।
ঘটনার দিন মুঠোফোনে মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, গাছ গুলো আমার। টাকা নেওয়ার জন্য কয়েকজন মেম্বার এই সব কাজ করছেন। আপনাকে (সাংবাদিক) কে সংবাদ দিয়েছে বলেন তো, সাংবাদিকরা কখনো সোর্স এর নাম প্রকাশ করেনা।
নুর আলম বলেন, এই জমি আমরা চার আনা অংশে ২৪শতক জমি পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত হই। দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি আমার অংশ মনিরুজ্জামানের নিকট বিক্রি করেছি।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলী বলেন, ওই দাগে ৯৬শতক জমির মধ্যে ৫০শতক জমি আমাদের পরিষদের
নামে রয়েছে। যার খারিজ করা হয়েছে। কারফিউ এর ফাঁকে মনিরুজ্জামান গাছ গুলো কেটেছে, আমি জানতাম না। পরবর্তীতে জানতে পেরে গাছ গুলো অন্যত্র সরিয়ে না নিতে বাধা-নিষেধ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) উভয় পক্ষের মধ্যে সালিশী বৈঠক হলে জটিলতা থাকায় গাছগুলো বিক্রি কিংবা সরিয়ে না নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জানতে পারলাম জুম্মার নামাযের ফাঁকে মনিরুজ্জামানরা গাছ গুলো ভ্যান যোগে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। পরে দুই জন ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দিলে তাদেরকেও কোনো তোয়াক্কা করেননি। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ড মহোদয় সরেজমিনে এসে গাছ গুলো জব্দ করেন।
ইউপি সদস্য আইবুল হক ও ওবায়দুল হক বলেন, আমরা বাধা দিলে কোনো তোয়াক্কা করেননি মনিরুজ্জামান মিন্টুর লোকজন। বাধ্য হয়ে ইউএনও মহোদয়কে অবগত করা হয়। আইবুল হক বলেন, মিন্টুর সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি কেন ইউএনও স্যারের সঙ্গে যাবেন বরং ইউএনও স্যার তার কাছে আসবেন জানিয়েছেন।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল গণি বলেন, তিনি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জানতে পারেন ওই দাগে পরিষদের নামে জমি রয়েছে। পরে এবিষয়ে চেয়ারম্যানে বাসায় উভয়পক্ষ বসলে কি সিদ্ধান্ত হয় তা তিনি জানেননা।
তিনি আরও বলেন, পরিষদের জায়গা থেকে গাছ কাটা হয়েছে এবং সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পেরে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ২৬-২৮ জুলাই পর্যন্ত ছোট-বড় ২১৭ পিস লক অফিস চত্বরে নিয়ে গিয়ে জব্দ তালিকা প্রণয়ন করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ জব্দ করা হয়েছে। গাছ কর্তনের জায়গায় পরিষদের নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তি রয়েছে। মনিরুজ্জামান মিন্টু ও নুর আলমকে তাদের উপযুক্ত কাগজপত্র নিয়ে বসতে বলা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন