পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার ৭মাসেও জালিয়াতির জবাব দেয়নি অধ্যক্ষ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার এমপিওভুক্ত ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক তালিকাভুক্তে তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার সাত মাসেও সময় চেয়ে জালিয়াতির জবাব দেয়নি অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান। ফলে তদন্ত রিপোর্ট আটকে আছে উপজেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছাচ্ছেনা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সহ পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের নিকট।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি কর্তৃক গত সালের ২৮ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসানকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্টের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে সরেজমিনে তদন্ত করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান। ওই মাসেই তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিস কার্যালয়ে।

এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সভাপতি এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত দুই শিক্ষকের অগ্রায়নপত্র কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরণ করেন এবং অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি স্থগিত করা হয়।

ওই প্রতিষ্ঠানে জন্মলগ্ন থেকে ৯জন শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়োগে তালিকাভুক্ত দেখানো পাঁচ শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিমল কুমার রায়, কম্পিউটার আপারেশন বিষয়ের প্রভাষক সফিকুল আলম, সাচিবিকবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক দিলিয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক দিলারা বেগম এবং নিন্মমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক/কম্পিউটার অপারেটর উম্মে বিনতে সালমা।

গত বুধবার (৩১ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় থেকে জানতে পারা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৫শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ার পরেও প্রতিষ্ঠান প্রধান আবু সুফিয়ান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সভাপতি এর নিকট ৯জনের স্থলে ১৬জনের নামের তালিকায় স্বাক্ষর নিতে একটি ফাইল জমা করেন।

এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সভাপতি তাঁর জালিয়াতির কলাকৌশলের চালাকি স্পষ্ঠভাবে বুঝতে পারেন। কেননা ওই ফাইলে স্বাক্ষর হলেই প্রতিষ্ঠান প্রধান তদন্ত প্রতিবেদনের পরবর্তী কার্যক্রম থেকে বেঁচে যেতেন।

তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান বলেন, তিনি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শিক্ষকের নিয়োগের বিষয়ে সঠিকতার পক্ষে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, পাঁচ শিক্ষকের নিয়োগে নম্বর পত্রে ত্রুটি, স্বাক্ষর অমিল সহ নানা সমস্যা রয়েছে। ওই সময়ে ইউএনও’র প্রতিনিধির পক্ষে কোনো দলিলাদি দেখাতে পারেন নাই প্রতিষ্ঠান প্রধান। এছাড়া আপনি(সাংবাদিক) জানেন জালজালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে।

এ ব্যাপারে সভাপতি ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসের ৫তারিখ আমার কাছে প্রদর্শিত ১৬জন শিক্ষক-কর্মচারীর তালিকার মধ্যে ৫জনের নিয়োগ বিষয়ে কোনো কিছুই জানা ছিলনা, কখন কিভাবে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ রেজুলেশন প্রক্রিযাগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন মনে হয়।

এ জন্যই তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্তপূর্বক আমার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের স্বপক্ষে প্রমাণ্য কাগজপত্রাদি উপস্থাপন ও জবাব দিতে সময় চেয়ে আসছেন। কখন তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দেয়া হবে।