পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বসত বাড়িতে আগুন, পরিকল্পিত দাবী ভুক্তভোগী পরিবারের


পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বসত বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী মোশারফ হোসেনের পরিবার। এদিকে তেঁতুলিয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ভাড়াটিয়া লোকজনের মাধ্যমে আগুন লাগানোর কথা শুনে হামলার আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে যায়নি।
ঘটনার পরের দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর পুড়ে যাওয়া বসতবাড়ি সহ আরও জমি দখলে নিয়েছেন একই গ্রামের মৃত মতিয়ারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন।
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার পর জুম্মার নামাযের সময় উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের লোহাকাচি গ্রামের মৃত মসলিম আলীর ছেলে মোশারফ হোসেনের বসত বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, উপজেলার লোহাকাচি মৌজার এস.এ ৯৬ নং খতিয়ানের ৩১৬৭নং দাগে প্রায় কয়েকবছর ধরে বিজ্ঞ আদালত পঞ্চগড়ে পৃথক দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে। ভুক্তভোগী মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে গত ২০২১ সালে দেলোয়ার হোসেনসহ ১০জনকে বিবাদী করে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত তেঁতুলিয়া পঞ্চগড়ে ১১১/২০২১ নং বাটোয়ারা মামলা করেন।
অপরদিকে দেলোয়ার হোসেন সহ ৪জন বাদীভুক্ত হয়ে গত ২০২৩ সালে মোশারফ হোসেনসহ ২০জনকে বিবাদী করে বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত পঞ্চগড়ে ২৭৪/২০২৩ নং অন্য উচ্ছেদ পূর্বক পুনঃ পুনরুদ্ধারের মামলা করেন। উভয়ের মামলা দুটি চলমান রয়েছে। উক্ত দাগে মোশারফ হোসেন গত ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে বসতবাড়ি করে বসবাসে অবস্থানে থাকলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার তার বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলা করা হয়।
পরে তিনি সরকারি আইনগত সহায়তা সংস্থা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে দেলোয়ার হোসেনসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আমলী আদালত তেঁতুলিয়া পঞ্চগড়ে একটি সিআর মামলা করেন। এদিকে একই তারিখে ভিন্ন ঘটনায় এডিসি দেলোয়ার হোসেনের চা বাগানের কর্মচারী মৃত সামসুল হকের ছেলে জামাল বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় মোশারফ হোসেনসহ ৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
উভয়ের পাল্টাপাল্টি মামলায় মোশারফ হোসেন তার বসতবাড়িতে শান্তিময় পরিবেশে বসবাস করতে থাকলে ২১ তারিখ গত শুক্রবার ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে এমন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও জানা যায়, মোশারফ হোসেন ৯৬ নং খতিয়ানের স্বয়ং রেকর্ডী মালিক এবং আমমোক্তার নামা দলিল মূলে পরবর্তীতে রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল আওয়াল কর্তৃক গত ১৯৫৭ সালের ৬ জুন ২৪০৩ নং কবলা খরিদ মূলে মালিক প্রাপ্ত হন।
সরেজমিনে গিয়ে জিজ্ঞাবাদে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক মহিলা বলেন, ওই যে নদীর ধারে ময়নাগুড়ি কোম্পানি আছে না ওই দিকে। কার ঘর জ¦লছে এমন জিজ্ঞাসায় ওই মহিলা বলেন বাচ্চুর। ওই যে ডাঙ্গী বাড়ি। এটা কিভাবে জ¦ললো এমন প্রশ্নে বলেন, মাইনসে বলে জ¦ালাই দিছে নাকি শুইনছি এডিসি।
ওনার সঙ্গে তার আগে থেকে জমাজমি নিয়ে বিরোধ কিনা এমন জিজ্ঞাসায় ওই মহিলা বলেন, হে জমাজমি নিয়ে। ওই মহিলা চলে যাওয়ার সময় আরও বলেন, এডিসির জমিনোত এমরা(মোশারফ) বাড়ি কইছে (পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক ভাষায়)।
এলাকাবাসির কাছ থেকে জানা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া বসতবাড়িতে মোশারফ হোসেন বসবাস করতেন। ঘটনার দিন অনেক গুলো লোক ফার্ম এর ওই দিক থেকে এসে তার বাড়িটি আগুন লাগিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। ওই সময় কেউ সেখানে ভিড়তে পারেননি। হাতে বড় বড় দা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লোকগুলো।
ভুক্তভোগী মোশারফের বউমা খালেদা বলেন, তার স্বামী ও দেবরকে এডিসিরা (অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও এডিসি) ষড়যন্ত্র করে থানায় ধরিয়ে দিয়ে আমার শ্বশুরের বাড়িটি ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে আগুনে পুড়ে জমি দখল করার পাঁয়তারা করেন। ওখানে তার শ্বশুরের গরু ছাগল হাঁস মুরগি ধান চাউল স্বর্ণালংকার আসবাবপত্র একটি পরিবারের যা লাগে সবই ছিলেন। বাড়িটি পুড়িয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ আসলে গরু ছাগল নিতে পারলেও অন্যান্য সব পুড়ে ছাই করে দিয়েছেন।
ইতি আক্তারসহ কয়েকজন মহিলা বলেন, আমরা দুর থেকে দেখতেছি অনেকগুলো লোক কথায় থেকে এসে ঠিক জুম্মার নামাযের সময় ওই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হাতে বড় বড় দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং মোবাইলে ভিডিও করছেন। আর চিল্লায় বলছেন, এখানে কেউ আসবেন না।
মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি খতিয়ানের রেকর্ডীয় ও ক্রয় সূত্রে ৮একর ৮৪ শতক জমির মালিক। বসতবাড়িসহ ৩১৬৭ নং দাগে তার নাম উল্লেখ পূর্বক ৩একর ৬৫শতক জমির একটি সাইনবোর্ড ছিলেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দাগে জমি বিক্রি করলেও এই দাগে কোনো জমি বিক্রি করেননি। যদিও বিক্রি করে থাকেন যাদের কাছে বিক্রি করেন তারা না এসে এডিসি (অবসরপ্রাপ্ত দেলোয়ার) আসার কোনো প্রশ্নেই আসেনা বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার জমি দখলে নিতে এডিসি (অবসরপ্রাপ্ত দেলোয়ার) ও সবুজ মিলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার তার দুই ছেলেকে দলীয় মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে এমন অত্যাচার করছেন। এরপরে আবারো গত ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঠিক জুম্মার নামাযের সময় ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে এসে আমার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত এডিসি ও সচিব দেলোয়ারের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দেলোয়ার এডিসির (অবসরপ্রাপ্ত) ক্ষমতা দেখিয়ে এসব কান্ড ঘটাচ্ছেন।
অপরদিকে দেলোয়ার হোসেন বলেন, মোশারফ হোসেন আমার ওপর একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে আসছেন। এ যাবৎ যতটি মামলার রায় হয়েছে প্রতিটি তার (মোশারফ) বিরুদ্ধে হয়েছে। মোশারফ হোসেন এডিএম কোর্টে একটি মামলা করলে সে রায় আমার পক্ষে আসলে রিভিশন করেন এরপর জেলা জজ নিম্ন আদালতের রায়টিকে বহাল রেখে ওই জমি থেকে তাকে (মোশারফ) সরিয়ে দিতে থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তা ফলপ্রসূ না হলে ২০২৩ সালে ৫একর ১৬ শতক জমি থেকে উচ্ছেদ মামলা করেন দেলোয়ার। তিনি আরও বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি উনার শ্রমিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার মামলা থেকে রেহাই পেতে মোশারফ হোসেন নিজের বাড়িতে নিজেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। পুড়িয়ে যাওয়া বসত বাড়ির ভিটে মাটি আপনার শ্রমিক দিয়ে সমান করছেন কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই জমি থেকে তখনই সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ ছিল। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে সেটা হয়নি। এখন সে জমি অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও এডিসি দেলোয়ার হোসেনের দখলে জানিয়েছেন।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর স্টেশন অফিসার জিল্লুর রহমান প্রাং বলেন, মোশারফের পরিবার থেকে শালবাহান ইউনিয়নে লোহাকাচি গ্রামে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সংবাদ দেয়া হয়। সেখানে আইন শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা থাকায় পুলিশের সহযোগিতা নিকে থানায় ফোন দিলে তারা ব্যস্ত আছেন জানান।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে জানালে কোনো সাড়া না পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়নি। তবে সিভিল পোশাকে খোঁজ নেয়া হলে সেখানে ওই এলাকার মানুষই যেতে পারেনি, এমন অবস্থায় সেখানে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ঝুকিপূর্ণ বিষয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত কবির বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন