ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিনামূল্যের ভিডব্লিউবি চাল বিতরণে টাকা আদায়
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির বিনামূল্যে চাল বিতরণে কার্ডধারী উপকারভোগী মহিলাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে এ ধরনের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩-২০২৪ ভিডব্লিউবি চক্রের আওতায় দুই হাজার ৫৬৭ জন মহিলা এ সুফল ভোগ করছেন। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিজন মহিলা তাদের পরিবারের জন্য মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি হারে চাল পেয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নে ৩৩৫জন মহিলা এই ভিডব্লিউবি কার্ড পেয়েছেন। কার্ডধারীদের অভিযোগ কার্ড বিতরণের সময় তাদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে ট্যাক্স নিয়ে এই কার্ড বিতরণ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ভজনপুর ইউনিয়নে চাল বিতরণের সময় সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, উপকারভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের চাল বিতরণের সময় তিন মাসের(জানু-মার্চ) একসঙ্গে ৬০টাকা ও এপ্রিল মাস ২০টাকা বস্তাপ্রতি আদায় করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। বস্তার খরচ বাবদ টাকা আদায় পাঁচ মাসে সাড়ে ৩৩ হাজার। ট্যাক্স আদায় ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আরোও ১০০টাকা
উপকারভোগী মহিলাদের কাছ থেকে টাকা আদায়কারী সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছাঃ হালিমা খাতুন বলেন, ‘চেয়ারম্যান বস্তার খরচের জন্য এই টাকা তুলতে বলেছেন। আমরা শুরু থেকেই বস্তার টাকা তুলে আসছি।’ তৎসঙ্গে সাব্বির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকেও উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা গেছে।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লিপি আক্তার বলেন, ‘আপনি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ভালোভাবে জানতে পারবেন, উনাকে আপনি ফোন করেন।’ এসময় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোকবুল হোসেন বাঙ্গালী উপস্থিত ছিলেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব এবং ট্যাক অফিসার কাউকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।
ওই ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বর গ্রামের ও ৪নং ওয়ার্ডের কয়েকজন উপকারভোগী মহিলা জানান, ‘বস্তার তানে হামারঠে বিশ টাকা করে নিছে।’ এর আগেও কার্ড বিতরণের সময় ৬০০টাকা নিয়েছে। এরপর ১ম চাল বিতরণের সময় ৭২০টাকা, ২য় চাল বিতরণের সময় বস্তার টাকাসহ ২৪০টাকা, আর আজ ২৫ মে চাল বিতরণের সময় ২৪০টাকা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী উপকারভোগী মহিলাগণ।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের এক নোটিশের আদেশের মাধ্যমে জানা যায়, ভিডব্লিউবি খাদ্যের পরিবহন ব্যয় বরাদ্দ সমতল এলাকায় দুরুত্বের বিবরণ অনুযায়ী প্রতি মেঃটন চালের জন্য ১-১০ কিঃমি পর্যন্ত ৬০০ টাকা, ১১-২০ কিঃমি পর্যন্ত ৭০০টাকা এবং ২১ কিঃমি ও তদুর্ধ্ব ৭৫০টাকা প গড়ের পাঁচটি উপজেলায় এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ভিডব্লিউবি দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাক অফিসার মোঃ আব্দুস সামাদ প্রধান বলেন, ‘চাল বিতরণ হবে আমাকে অবগত করা হয়নি, তবে চিঠি পেয়েছি। কোন দিন চেয়ারম্যান চাল বিতরণ করবেন সে তথ্য আমাকে না জানালে আমি কিভাবে জানতে পারবো আজ ওই ইউনিয়নে চাল বিতরণ করা হবে। এর আগে অবগত করলে আমি একবার উপস্থিত ছিলাম, আজ অবগত করলে আমি না যেতে পারলেও প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিতাম। আমাকে তো অফিসিয়াল কাজও করতে হয়।’
এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা করুনা কান্ত বলেন, গাড়িভাড়া ও লোড-আনলোড বাবদ সব খরচের টাকা সরকারিভাবে দেওয়া হয়। উপকারভোগী মহিলাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মসলিম উদ্দীন বলেন, ‘বস্তার জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে লোড-আনলোড বিভিন্ন খরচ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন