পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বুড়াবুড়ি মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়ম

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়াবুড়ি মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গেলে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন স্থানীয় সচেতন মহল। এদিকে অনিয়ম সুদ্রাতে বিদ্যালয় প্রধানকে না জানিয়ে ছাদের আংশিক ভেঙে কার্নিশ ঢালাই করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক দেলয়ারা বানু।
স্থানীয়দের দাবি উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদার যোগসাজস করে দায়সারা ভাবে নিন্ম মানের সামগ্রী দিয়ে ভবনের নির্মাণ কাজ করে আসছেন। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ কাজের বিবরণ সম্বলিত সাইন বোর্ড দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা টাঙানো হয়নি। ফলে এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বুড়াবুড়ি মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ পায় তপন নামে এক ঠিকাদার।
ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর পর নিন্ম মানের নির্মান সামগ্রী পরিলক্ষিত হলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ হয় কিন্তু উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদার এবং তার (ঠিকাদার) লোকজন এসবকে কোন পাত্তাই না দিয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ভবন নির্মাণ কাজ করতে থাকেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় তলায় দবিরুল নামের এক ঠিকাদারের লোকজন কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
আরও জানা যায়, বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার ছাদ আগে ঢালাই করা হলে পরে ছাদটির ফ্রন্ট সাইট ভেঙে কার্নিশ ঢালাই করা হয়েছে। ছাদ ভেঙ্গে কার্নিশ ঢালাই করার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। ‘শুধু তাই নয়, কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্মাণ সামগ্রীর নমুনা সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও তারা তা করেনি।
কাজের মান নিয়ে অভিযোগ তোলার পর মনগড়াভাবে কয়েকটি নমুনা তৈরি করেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। প্রকৌশল অফিস থেকে যিনি দেখভালের জন্য আসেন তাকে অনিয়মের বিষয়গুলো বললে কর্ণপাত করছেননা’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজে নির্দিষ্ট অনুপাতের ইটের খোয়া ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে ইটের গুঁড়া, গাঁথুনীতে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের ইট। আরসিসি কলাম ঢালাইয়ে করা হয়েছে বাঁকা, রুফ বিম ঢালাইয়ে অসংখ্য হানিকম্ব।
রাজমিস্ত্রী মামুন বলেন, মাপে শর্ট ছিল হয়তো আগের মিস্ত্রী ভুল করেছে। তবে আমরা ছাদ ভেঙে রড ওয়েল্ডিং করে ঢালাই দিয়েছি।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, ছাদ ঢালাইয়ের পর কার্নিশ ঢালাই তারা আদৌ দেখেননি এই বিদ্যালয়ে প্রথম দেখলেন। তারা বলেন, বিদ্যালয়ে যে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে তা নি¤œমানের ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা এই ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনিয়মের বিচার চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেলয়ারা বানু বলেন, তিনি ১ম ও ২য় ছাদ ঢালাইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে যখন প্রধান শিক্ষকের রুম আসছেন সেই রুমের ছাদ ঢালাইয়ের সময়েও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ ছাদ ভাঙানোর সময় তাকে জানানো হয়নি এবং তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেননা।
তিনি বলেন, যখনই কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছেন তখনই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে তারা (এলজিইডি ও ঠিকাদার) বেশির ভাগ কাজ করেছেন ছুটির দিনে। এই নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এখানে এলজিইডি আমাদের কোন পাত্তাই দিচ্ছেনা তারা (এলজিইডি) আমাদের টিচারদের অপমান করছেন। তিনি আরও বলেন, এই নির্মাণাধীন ভবনটি হাইস্ট বারো বছর এর বেশি সময় টেকসই করবে না বলে মন্তব্য করেন।
বর্তমান ভবন নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদার দবিরুল ইসলাম বলেন, কার্নিশটা আামদের মাপযোগে উপরে কম করা ছিল না বেশি ছিল ওটা তখন ইঞ্জিনিয়ার মাপটা একটু ভুলে গেলে ফিতা দিয়ে পরে তখন আবার বেশি রড লাগিয়ে ঝালাই(ওয়েল্ডিং) করে লম্বা করে দিয়ে তারপরে রড মিল করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে মুঠোফোনে কল করলে কলটি রিসিভ না হওয়ায় কথা বলার সুযোগ হয়নি।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রীস আলী খান বলেন, ছাদটি আগে ঢালাই হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি রুম বরাদ্দ হয়। পরে যে রুমের বরাদ্দ হয় সেই রুমের ডিজাইনে আগের ছাদ থেকে একটু বাড়তি দেখানো হয়েছে। তাই একই লেভেল ও ভালো দেখার জন্য ছাদ একটু কেটে ওয়েল্ডিং করে দেখার পর ঢালাই করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কেউ গাফিলতি করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এটা অনেকদিন আগের কাজ ফাইল দেখে বলতে হবে। তবে ৯৮ লাখ টাকার বরাদ্দ হতে পারে। আমার উপসহকারী প্রকৌশলী(এসএই) কে বলে দিব আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন