পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় হারভেস্টারে ধান কর্তনে সরকারি মূল্য বলতে পারছেন না কৃষি অফিসের কেউ?

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের তুলশীয়ার বিল এলাকায় চলছে বোরো ধান কর্তনের মৌসুম। এই মৌসুমে ধান কর্তনে কৃষকরা নির্ভর করছেন সরকারের দেওয়া কম্পাইন হারভেস্টারের ওপর। অথচ কৃষি অধিদপ্তরের নির্ধারিত সরকারি মূল্য বলতে পারছেন না উপজেলা কৃষি অফিসের কেউ!
এদিকে মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ অনিয়ম। বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন হারভেস্টার মালিকরা। কৃষি অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যের কোনো বালাই নেই সরেজমিনে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকারের উন্নয়ন সহায়তা (ভুর্তুকি) মেশিন দিয়ে ধান কাটাই-মাড়াইয়ের নির্ধারিত মূল্য কত, তা জানেন না কৃষক, মেশিন মালিক এমনকি দায়িতপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তারাও!
কৃষকদের অভিযোগ, মাঠে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত খরচ গুনে মেশিন ডাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক আইনুল হক বলেন, “চার হাজার টাকা চেয়েছে ধান কাটা বাবদ। সরকার থেকে কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমরা জানিনা। কৃষি অফিস আমাদের জানালে এই বাড়তি টাকা গুনতে হতো না।” স্থানীয় কৃষক জুয়েল বলেন, তার ধান খেত রাস্তার কাছে হওয়ায় ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন হারভেস্টর মালিক।
একই অভিযোগ আরও কয়েকজন কৃষকের। কেউ কেউ বলেন, “একেক জন একেক দাম নিচ্ছে। নিজের খরচ বাড়িয়ে হলেও বাধ্য হচ্ছি ধান কেটে নিতে।”
কম্বাইন হারভেস্টার মালিক সুমন ও আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা জানি না সরকার কত টাকা নির্ধারণ করেছে। কৃষি অফিস কোনোদিন কিছু জানাইনি, মেশিন দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ। কয়েক দিন পর পর মেশিন নষ্ট হয়, তখন কোম্পানির লোক আসতেই চাইনা।
আর যন্ত্রপাতি বাহিরে কিনলে কমে পাওয়া গেলেও কোম্পানির কাছ থেকে অনেক চড়া দামে কিনতে হয়। তারা আরও বলেন, কৃষকদের চাহিদা অনেক। আমরা তাদের দামের মধ্যেই ধান কেটে দিচ্ছি।”
ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “তিনি এ বিষয়ে তেমন জানেন না সরকারি রেট কত? জেনে তারপর জানাতে চেয়েছেন। তবে তিনি দেখতেছেন কৃষকরা মাঠে ধান কাটতেছে।”
এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয় যে, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও অফিস কর্মীরা সরকারের নির্দেশনা বা নির্ধারিত মূল্য সম্পর্কে না জেনে দায়িত্ব পালন করছেন, যা কৃষকদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জীবন ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘একটি রেজুলেশন আমরা করছিলাম সেটি ফাইনাল্লী হয়নি এখনো মনে হয় অনুমোদন। ওইটা করছিলাম ৫হাজার টাকা সম্ভবত এডজেক্ট বলতে পারবো না। তখন আমি বাইরে প্রশিক্ষণে ছিলাম।’
উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস এর কাছ থেকে জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানা যায়, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তবে এ ধরনের দায় এড়ানো বা তথ্য না জানার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও দিক নির্দেশনার অভাবকেই নির্দেশ করে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরকার আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষি সহজ ও লাভজনক করতে চাইলেও বাস্তবায়নের অভাবে কৃষকরা পড়ছেন সংকটে। ক্যাম্পাইন হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুনির্দিষ্ট ধান কাটাই-মাড়াইয়ের কৃষি অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য ও প্রচার ছাড়া কৃষকদের জন্য এটি আরও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কৃষি অফিসের এমন উদাসীনতা ও নজরদারির অভাব এখন শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয় বরং কৃষকের ওপর এক ধরণের অবিচার হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন