সরিষা চাষে সফল কৃষক তহিদুল আব্দুর রহিম

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবছর দ্বিগুণের বেশি সরিষার চাষ বেড়েছে

নীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষার ফুল। সকালে সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ফুটে আছে হলুদ সরিষার ফুল। শীতের হাওয়ায় ফুলের সুভাস মোহিত করছে চারপাশ। চারদিকে সরিষা ফুলের সমারোহে মাঠে ছড়াচ্ছে নান্দনিক সৌন্দর্য, আর সরিষা ফুলকে ঘিরে মধু আহরণে ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি। পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে থাকে। ফুলগুলো তাদের কলি ভেদ করে সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। উপজেলার বাংলাবান্ধা, তিরনইহাট, তেঁতুলিয়া, শালবাহান, বুড়াবুড়ি, ভজনপুর ও দেবনগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা চাষের এ রকম দৃশ্য দেখা যায়।

গত বছরের তুলনায় এবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর উপজেলায় ২শ’ ২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবছর সরিষার আবাদ হয়েছে ৫শ’ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ।

কৃষকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবছর ফলন ভালো হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরিষার উৎপাদন হলে সয়াবিন তেলের উপর থেকে চাপ কমবে বলেও জানান তারা। একই কথা উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে তেঁতুলিয়ায়।

এদিকে গতবারের মতো এবারও বারি সরিষা-১৪ চাষকারী তহিদুল ও আব্দুর রহিম সরিষার আবাদ করে পুরো উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

তহিদুল উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বলেন, গতবার ১একর জমিতে বারি সরিষা-১৪ লাগিয়ে ভালোই লাভবান হয়েছেন। তাই এবার ৫একর জমিতে বারি সারিষা-১৪ লাগিয়েছেন। তিনি আরোও বলেন, গতবার বারি সরিষা-১৪ লাগিয়ে ১ একরে বিশ মন সরিষা পেয়েছি, দামও ছিল ভালো। তিনি গতবার প্রতি মন সরিষা বিক্রি করেন ৩ হাজার ২শ’ করে এবার তা ছাড়িয়ে ৪ হাজার পর্যন্ত বিক্রির আশা করবেন বলে জানিয়েছে।

আব্দুর রহিম একই ইউনিয়নের বুড়াবুড়ি গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি বলেন, সরিষা বিনা চাষেই উৎপাদন করা যায়। জমি সমান করা লাগে না, সেচ লাগে না। শুধু রোপণ করে দিলেই হয়। আর তেমন খরচ নেই। খাটা-খাটুনি ছাড়াই সরিষার ভালো ফলন পাওয়া যায়। এসব কারণে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছি। গতবার তিনি সরিষার আবাদ করেন। এবারও তা বাড়িয়ে ৫একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে। আমার তেল কেনা লাগবে না। সরিষা থেকে খৈল হয়। গরুর খৈল কেনা লাগবে না। ফলে সরিষা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই বললেই চলে।
বুুড়াবুড়ি গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, ‘আমি এ বছর কৃষি অফিস থেকে বারি সরিষা-১৪ জাতের বিজ এনে ৫০শতক জমিতে রোপণ করেছি। পুষ্ট গাছে ফুলের আধিক্য দেখে ভালো ফলনের আশা করছি।’

উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, এই ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক আছেন যারা গতবার সরিষার আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। এবার তাঁরা গতবারের চেয়ে আরও বেশি জমিতে বারি সরিষা-১৪ এর বীজ রোপন করেন। তিনি বলেন, বারি সরিষা-১৪ ৮৫দিনের মধ্যে মাড়াই ও কাটায় সম্পন্ন করা যায় বলে এলাকার কৃষক এই জাতের আবাদটি বেশি করেন। অন্যদিকে সর্বশেষ বারি সরিষা-১৮ জাতের সরিষার আবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫শ’ হেক্টর জমি। অর্জিতও হয়েছে ৫শ’ হেক্টর জমি। ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ২শ’৮০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। উন্নত জাত যেমনঃ বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮ জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে। তবে সর্বশেষ হচ্ছে বারি সরিষা-১৮ এই জাতের আবাদ কৃষকরা খুবই কম হারে আবাদ করছেন। বারি সরিষা-১৮ জাতের প্রতি কিভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করা যায় আমিসহ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সরিষা মৌসূমে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ বিতরণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অব্যাহত থাকবে।