পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গম বিক্রয়ে অনিয়ম ভ্রাম্যমাণ আদালতে ডিলারকে কারাদন্ড

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গম বিক্রয়ে অনিয়মের দায়ে মেসার্স রিপন এন্টারপ্রাইজ নামের এক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ডিলারকে ভ্রাম্যমান আদালতে এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি নামক বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স রিপন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজিমুল হককে এই কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

জানা যায়, ডিলার নজিমুল হক গত ১৫ নভেম্বর ৬০ নম্বর ডেলিভারী স্লিপের মাধ্যমে বিএডিসি গোডাউন, পঞ্চগড় হতে বারি-৩০ জাতের গম বীজের ২’শ ২৫ বস্তায় ২হাজার ৫’শ কেজি গম বীজ সংগ্রহ করেন। যা স্থানীয় কৃষকগণের মধ্যে নির্ধারিত মূল্যে ডিলারের নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্র বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি বাজার হতে বিক্রয়যোগ্য। ডিলারকে ওই ডেলিভারী স্লিপের বিপরীতে উপজেলা কৃষি অফিস, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় এ দাখিলকৃত এরাইভাল রিপোর্ট প্রদর্শন করতে বলা হলে তিনি তা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হন।

উপরন্তু, ২’শ ২৫ বস্তা গম বীজ স্থানীয় কৃষকের নিকট বিক্রয়ের প্রমাণ স্বরূপ বিক্রয় রশিদ, স্টক রেজিস্টার বা সংগ্রহ রেজিস্টার ইত্যাদিও প্রদর্শন করতে পারেননি। অপরদিকে, রিপন এন্টার প্রাইজের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে জব্দকৃত টালি খাতা যাচাই এবং উল্লিখিত ডিলার নজিমুল হকের মৌখিক স্বীকারোক্তি মোতাবেক ৬০ নম্বর ডেলিভারী স্লীপের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত ২’শ ২৫ বস্তাসহ ভজনপুর ইউনিয়নের ডিলারের নামে বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত ২’শ ২৫ বস্তা হিসেবে মোট সাড়ে ৪শ বস্তা গম বীজ বিএডিসির অনুমোদনবিহীন ৫ জন ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করেন।

যার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী ‘প্রতিশ্রুতি পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিবার অপরাধ করেছেন। একই সাথে নজিমুল হক বিএডিসির একজন নিবন্ধনকৃত ডিলার হিসেবে সেবার মূল্য তালিকা অর্থাৎ কৃষকের নিকট গমের বীজের বিক্রয়ের নির্ধারিত মূল্য তালিকা বিক্রয় কেন্দ্রের দৃশ্যমান স্থানে লটকিয়ে প্রদর্শন করেননি যা উল্লিখিত আইনের ৩৯ ধারা মোতাবেক অপরাধ করেন।

এর ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৯ এবং ৪৫ ধারা লংঘনের অপরাধে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র লাইসেন্স প্রাপ্ত বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি বাজারের ডিলার এবং মেসার্স রিপন এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজিমুল হককে আটক করা হয়।
পরে গম বীজ বিক্রয়ে এ সকল অনিয়ম ও অপরাধ স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে উপস্থিত স্বাক্ষীগনের সম্মুখে স্বীকার করায় শিলাইকুঠি বাজারের উক্ত বীজ ডিলার মেসার্স রিপন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজিমুল হককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনর ২০০৯ এর ৩৯ ধারা এবং ৪৫ ধারাদ্বয় লক্সঘনের দায়ে ৩৯ ধারায় ০৬ (ছয়) মাস এবং ৪৫ ধারায় ০৬ (ছয়) মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। প্রদত্ত দন্ডসমূহ একসাথে ভোগ করবেন মর্মে আদেশ প্রদান করে নজিমুল হককে পঞ্চগড় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

আরোও জানা যায়, কারাদন্ডপ্রান্ত এই ডিলার এলাকাবাসী কৃষকদের নিকট গম বিক্রি না করে, দুই চালানে সাড়ে ৪শ বস্তা গম বুড়াবুড়ি বাজারের এক কীটনাশকের দোকানে ৫০বস্তা, শিলাইকুঠি বাজারের এক কিটনাশক দোকানে ১০০বস্তা, শালবাহানের এক কীটনাশক দোকান এবং তিরনইহাটের এক কীটনাশক দোকানদারের নিকট বেশি দামে বিক্রি করে দেন। পরে স্থানীয় কৃষকদের শিলাইকুঠি ও বুড়াবুড়ি বাজারের কীটনাশক দোকানদারের কাছ থেকে ১হাজার ৪শ থেকে ১হাজার ৭শ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করতে হয়। এতে কৃষকদের ২’শ থেকে ৭’শ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হয়েছে। একএলাকাবাসীর অভিযোগ কারাদন্ডপ্রাপ্ত ডিলার প্রায় ৯ বছর ধরে শিলাইকুঠি বাজারের নাম ব্যবহারে ডিলারী লাইসেন্স নিয়ে আদৌ কৃষকদের নিকট কোনো সার কিংবা বীজ বিতরণ করেন নাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা এ দন্ডাদেশ দিয়েছেন।

এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তারেক হোসেন , উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক এবং তেঁতুলিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজসহ সঙ্গীয় ফোর্স এবং স্থানীয় প্রায় তিন শতাধিক কৃষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।