পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণে বাঁধা দিলেন নুরুল ইসলাম লালু
পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় কালের কন্ঠ শুভসংঘের তত্বাবধানে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণে বঁাধা দিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা।
সোমবার (৫ জুলাই ২০২১) তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের শালবাহান দাখিল মাদ্রাসা মাঠে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে শালবাহান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম লালু নামে এক ব্যাক্তি কালের কন্ঠের সহ-সম্পাদক আতাউর রহমান কাবুলকে বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ত্রাণ বিতরণে বঁাধা দেন।
মোবাইল ফোনে রেকর্ড হওয়া উভয়ের কথোপকথনের অডিও নিচে তুলে ধরা হলো…
নুরুল ইসলাম লালু ঃ হ্যালো কাবুল, কোথাই আছো?
কাবুল : শালবাহানে। কে বলছিলেন ভাই?
নুরুল ইসলাম : আমি আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি, ৪ নং শালবাহান ইউনিয়ন।
কাবুল : কি নাম আপনার?
নুরুল ইসলাম : নুরুল ইসলাম লালু ভাই।
কাবুল : ভালো আছেন ভাই?
নুরুল ইসলাম : জ্বি ভালো।
কাবুল : কি খবর ভাই বলেন?
নুরুল ইসলাম : খবর তো তোমাদের কাছে! তোমরা ত্রাণ বিতরণ করলা। আমাদের ইউনিয়নে বিতরণ করলা জানাইলাওনা। ঘটনা কি?
কাবুল : জানাতে হবে কেন? ত্রাণ বিতরণ তো সারাদেশেই চলছে। আমাদের সেচ্ছাসেবীরাই এসব ত্রাণ বিতরণ করছেন।
নুরুল ইসলাম : কারা বিতরণ করছেন?
কাবুল : কালের কন্ঠ পত্রিকার দেশব্যাপী একটি সংগঠন আছে যার নাম “শুভসংঘ”। শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা এসব ত্রাণ বিতরণ করছে। আমরা তো কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করছি না।
নুরুল ইসলাম : না করলে ঠিক আছে, তাহলে এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান আসলো কেন?
কাবুল : তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, উনার পদাধিকার বলে এসেছেন।
নুরুল ইসলাম : আমার ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করলে অবশ্যই আমাকে জানাতে হবে।
কাবুল : কেন জানাতে হবে?
নুরুল ইসলাম : আমরা সরকারি দলের লোক। ত্রাণ বিতরণ করতে হলে সরকারি দলের লোককে জানাতে হবে।
কাবুল : সরকারিভাবে তো এই ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে না।
নুরুল ইসলাম : বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ করলেও সরকারি দলের লোককে জানাতে হবে।
কাবুল : কেন জানাতে হবে?
নুরুল ইসলাম : ১’শ বার জানাতে হবে। না জানালে অন্য ইউনিয়নে দিবেন, আমার ইউনিয়নে নয়।
কাবুল : আমরা গরিব লোকজনকে দিচ্ছি।
নুরুল ইসলাম : গরিব লোককে দিলেও আমাকে জানাতে হবে। আপনারা কে?
এই বলে নুরুল ইসলাম লালু ফোনটি কেটে দেন।
এই ঘটনায় শুভসংঘের সেচ্ছাসেবীসহ স্থানীয় লোকজন অবাক হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালের কন্ঠের সহ-সম্পাদক আতাউর রহমান কাবুল বলেন, আমরা শালবাহান দাখিল মাদ্রাসা মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ করছিলাম। এ সময় ০১৭২১০৮৮৬৪৩ নাম্বার থেকে শালবাহান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে নুরুল ইসলাম লালু নামে একজন আমাকে ফোন দেন। কেন তাকে ত্রাণ বিতরণের কথা বলা হয়নি এজন্য তিনি ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে উল্টোপাল্টা কথা বলতে শুরু করেন। আমি খুব ভদ্রভাবে উনার সাথে কথা বলছিলাম। কিন্তু উনার কথাবার্তা ছিল হিংসাত্মক এবং অনেকটা হুমকিস্বরূপ।
আতাউর রহমান কাবুল জানান, বিষয়টি তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলুকে অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম লালুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
শালবাহান ইউনিয়নের আব্দুর রহমান বলেন, এই লালু স্থানীয়ভাবে চঁাদাবাজ হিসেবে পরিচিত। লোকজনকে হুমকি-ধামকি দিয়ে টাকা তোলাই তার কাজ। এর আগে ছাগল চুরির অপরাধে বিচারের মাধ্যমে সাইদুর চেয়ারম্যান তাকে মার ও দিয়েছিলেন। তার কারণে এখানে মূল ধারার লোকজন আওয়ামীলীগ করতে পারছে না। এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম তাদের হাতে দিলে লালু বরং গরিব লোকের কাছ থেকে টাকা নিতো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন