পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের জলসা কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মুসল্লিরা মামলা অতঙ্কে ঘরছাড়া
পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা কেন্দ্র করে স্থানীয় মুসল্লিদের সংঘর্ষে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মামলার অতঙ্কে দিক কাটছে স্থানীয় সাধারণ মুসল্লিদের।
পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও শহরের জনসমাগম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে নতুন করে ৩ টি মামলায় আরও ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে ১৬টি মামলায় ১৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা।
এদিকে এঘটনার এক সপ্তাহ পেরুলেও শহরের বিভিন্ন জায়গা গুলো জনশূন্যতা দেখা যাচ্ছে এবং জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজরদারীর মধ্যে রয়েছে।
শুক্রবার (১০ মার্চ) জুম্মার নামাজের আগে জেলা শহরের কেন্দ্র মসজিদের স্থানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বরত ছিলেন যাতে কোন প্রকার মিছিল বের করতে না পারে।
আহমদিয়া কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের জাতীয় ৯৮ তম সালানা বার্ষিক জলাসাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাধারণ মুসল্লিদের সাথে সংর্ঘষে ঘরবাড়ি, দোকানপাট,ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাংচুর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এখন ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি পঞ্চগড় সদর থানায় এবং বোদা থানায় অপর ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত বৃহষ্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস,এম সিরাজুল হুদা তিনি জানিয়েছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহলে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ সামনে রেখে অপচরিতার্থ বাস্তবায়নে লক্ষ্যে গত ২ মার্চ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বর্বরোচিত নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, ট্রাফিক পুলিশের অফিসকক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া এবং বয়স্ক কনস্টেবলকে পুড়িয়ে মারার অপচেষ্টে করা হয়েছে। আবার র্যাবের গাড়ি পুড়ানো ও সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা স্থলে প্রায় সাত থেকে আট হাজার লোকজন অবস্থান করছিল। জলসাকে কেন্দ্র করে সেখানে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ব্যক্তি চতুর পাশ থেকে আক্রমনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশসহ তাদেরকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। এঘটনায় সাধারণ মুসল্লিদের ওপর পুলিশ কোন প্রকার গুলি চালায়নি এবং গুলি চালালে সেখানে অনেক প্রাণহানি ঘটনা ঘটতো এবং সারাদেশে এর প্রভাব পড়তো।
তিনি আরও বলেন, অপশক্তি প্রয়োগে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত স্বার্থন্বেষী মহল সারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। ইতিমধ্যে ১৩টি মামলা নেওয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি, হত্যাকান্ডের একটি মামলা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে এবং ভিডিও ফুটেজ,সিসিটিভি ও ছবি সনাক্ত করে আসামীদের আটক করা হবে। এঘটনায় জারা জড়িত না সাধারণ নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় সাধারণ মুসল্লিরা মামলার আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা। দিনের বেলায় কাজ কর্মের সাথে জড়িত থাকলেও রাতের বেলায় আটকের ভয়ে তারা ঘরছাড়া হয়ে থাকে।
পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদ পাড়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৮০০০ হাজার এর বেশি অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে এই কারণে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা রাতের বেলায় বাড়িতে ঘুমান না। তিনি আরও বলেন সরকারের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি অতি উৎসাহিত হয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নের জেলা শহরের চাল ব্যবসায়ী তিনিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমার এলাকার একটি ছেলে আমার কাছে জানতে চায় পঞ্চগড়ের পরিস্থিতি কি সে প্রায় ঘটনার ১৫ দিন ধরে জেলা শহরে আসনে না কিন্তু গত কালকে তাকে পুলিশ আটক করেছে।
এদিকে দুই ব্যক্তির নিহতের এঘটনায় আরিফ গত জুম্মার সালাতের পর বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয় পুলিশের বাধার মূখে রাবার গুলিতে সে গুরুত্বর আহত হলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া পথে এম্বুলেন্সে মৃত্যু হয়েছে বলে তার পরিবার জানান।
এছাড়া জাহিদ হাসান (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার তার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সকালে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ এবং তাদের দুই জনের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা। তিনি জানান, ওই এলাকায় বাড়ি জ্বালাও পোড়াও, সরকারী গাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, পুলিশের উপর হামলা সব বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
গণসংযোগ প্রেস মিডিয়া বিভাগ এবং সালানা জলসার আহবায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, পঞ্চগড় আহমদিয়া কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ৯৮ তম সালানা জলসা আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে পরিচলনা করে আসছি। আমাদের মাহফিলে একদল সন্ত্রাসী নৈরাজ্যকারী আমাদের উপর নির্যাতন জুলুম করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিরিহ সাধারণ মানুষের প্রায় ১২০টি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে তার সঙ্গে লুটপাট করেছে। আমরা প্রশাসনের নিরব ভুমিকা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল তারা আমাদের কোন আইনি সহয়তা প্রদান করেন নাই। এঘটনায় আমাদের একজন মেধাবী কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জুম্মার সালাত শেষে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ পঞ্চগড় ডাকে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে নামাজ শেষে চৌরঙ্গি মোড়ে মিছিল নিয়ে এবং বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে চৌরঙ্গি মোড়ে আসলে পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করে। এক পর্যায় সে সময় পুলিশের সাথে সংর্ঘষ শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ হলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে ।
এসময় পুলিশ পাল্টা জবাবে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে করে প্রায় ৪০ জন মুসল্লিসহ পুলিশ গুরুত্বর আহত হন। এদের বাকি মুসল্লিরা উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি যোগ দেয়।
বিক্ষোভ মিছিল চলাকালিন সময়ে পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়া কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দোকান ঘর আহমদ নগর তেলিপাড়া এলাকার আহমদিয়াদের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়াও পুলিশের গাড়ি ভাংচুর এবং মহাসড়কে থাকা ট্রাফিক অফিস জ্বালিয়ে দেয়। শহরের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি অবস্থান থেকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাথে সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও এবিষয়ে জানতে, সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ পঞ্চগড় আহবায়কের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোনে পাওয়া যায় নাই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন