পঞ্চগড়ে মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যা

সম্প্রতি পঞ্চগড়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন পলাশ চন্দ্র বর্মন (৩০) নামের এক বখাটে যুবক। সে লাখরাজ ঘুমটি এলাকার শ্যামল চন্দ্রের ছেলে। ঘটনার পরিপেক্ষিতে বিচার দাবী করলে বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সমাধানের আশ্বাস দেয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

এঘটনার প্রায় ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন প্রকার বিচার পায় নাই ভুক্তভোগীর বাবা। বিচার চেয়ে বারবার ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হলে কোন ধরণের বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন গজেন চন্দ্র বর্মন (৫০) নামের এক ব্যক্তি।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের লাখরাজ ঘুমটি এলাকায়। নিহত গজেন চন্দ্র বর্মন ওই এলাকার মৃত নেভুরাম বর্মনের ছেলে।

নিহত গজেন চন্দ্র বর্মন বুধবার দিবাগত গভীর রাতে নিজের ব্যবহারকৃত চাদর পেচিয়ে বাড়ির পাশে থাকা আবাদি জমির পাশের একটি পাকুর গাছের ডালের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং বৃহষ্পতিবার দুপুরে লাশ পঞ্চগড় আধুধিক সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

এদিকে আত্মহত্যার জন্য মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মনকে দায়ী করেছেন মৃত ব্যক্তির পরিবারের বাকি সদস্যরা। এ ঘটনায় তাদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতার কারণে মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন গজেন বমর্ন।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সূজন চন্দ্র বর্মন তিনি জানান, কলেজ পড়ুয়া ছোট বোনকে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশি শ্যামল চন্দ্র বর্মনের ছেলে পলাশ চন্দ্র বর্মন অসৎ উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে টেনেহিছড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় পরিবারের লোকজন দেখে ফেলায় পলাশের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পলাশ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় মারাত্মক আহত হন তার ছোট বোন। চিকিৎসাধীন ছিলেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে।

সূজন বর্মন আরও বলেন, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আমাদের পারিবারিক ভাবে সন্মানহানি হয়। পরবর্তিতে আমরা পলাশের বিচার দাবী করলে চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন আমাদের আশ্বাস প্রদান করে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানান। কিন্ত ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও কোন উদ্যোগ নেননি ইউপি চেয়ারম্যান।

গত ২৪ জানুয়ারি চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদে বসার ধার্য তারিখ ছিল। সেই দিনও বসা হয়নি বলে আমরা ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। সেই আশঙ্কা থেকেই রাতে আমার বাবা কাউকে কিছু না জানিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমি ঘটনার অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে নোটিশ করেছি। গত ১ ফেব্রুয়ারীতে পরিষদে বসার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ কারিরাই আসেননি তারা যদি না আসে কিভাবে সুরাহা করবো। আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তবে কেন আত্মহত্যা করলো তা আমি জানিনা।

এ ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিঞা তিনি বলেন মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতন্তের জন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।