পদ্মায় তীব্র ভাঙন : চার দিনে নদীগর্ভে বিলীন ১২ গ্রাম

সর্বনাশা পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। তীব্র ভাঙনে গত চার দিনে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ১২টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে আরও অনেক এলাকা। ভাঙনের মুখে পড়া এসব এলাকার মানুষ বাড়িঘর সরিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করছেন। এসব এলাকার মানুষের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধহারে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক কাটছে না নড়িয়াবাসীর।

জানা গেছে, পদ্মার তীব্র স্রোতে দিন দিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। গত চার দিনে মোক্তাকারের চর, কেদারপুর ও ঘড়িষার তিনটি ইউনিয়নসহ ১২টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

গত চার দিনে যেসব এলাকা ও প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, মোক্তাকারের চরের শেহের আলী মাদবরের কান্দি, ইশ্বর কাঠি, পাচু খার কান্দি, কেদারপুর ইউপির ওয়াপদা লঞ্চঘাট, সাধুর বাজার, লঞ্চঘাট, চর নড়িয়া সাহেবের চর, চর জুজিরা/উত্তর কেদারপুর, দাসপাড়া, কেদারপুর, দেওয়া ক্লিনিক, রওশনারা শপিং মল, হেলথ কেয়ার ক্লিনিক, গাজী কালুর বাড়ি। এছাড়া নদী গিলে খেয়েছে সাধুর ও ওয়াবদা বাজারের দুই/তিন শতাধিক দোকান, চর জুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘড়িষার ইউপির চন্ডিপুর, শ্রী সত্য নারায়ণ মন্দির, পাঁচগাঁও, নড়িয়ার মুলফৎ গঞ্জবাজারের তিন শতাধিক দোকান। বিলীন হয়েছে বাসতলা বাজারের ১৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৪৫টি বসত বাড়িসহ শত শত একর ফসলি জমি।

নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজারের নয় শ’র মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে সবসময় ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা পদ্মার ভাঙনে ইতিমধ্যে নড়িয়া উপজেলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সাত শতাধিক স্থাপনা পদ্মায় তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন, মসজিদ, গাড়ির গ্যারেজ। যেকোনো মুহূর্তে পদ্মা খেয়ে ফেলতে পারে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটিও।

পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় সাত হাজার পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বাসতলা এলাকার মন্নান ঢালীর স্ত্রী জাহানারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের চোখের সামনে বাড়িঘর, জমি পদ্মা নদী নিয়ে গেল। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন কী করবো কিছু বুঝতে পারছি না।

কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, আমরা বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেত পারলাম না।

চর জাজিরা গ্রামের সুলতান লস্কর বলেন, নদী শাসন না করে পদ্মা সেতুর কাজ করা ঠিক হয়নি। ফলে আমরা নড়িয়া উপজেলাবাসী পদ্মার নদীর ভাঙনে পড়েছি।

কেদারপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সানাউল্যা বলেন, আমাদের কেদারপুর ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের ছয়টি নদীতে চলে গেছে। এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত নদী শাসন না করলে পুরো উপজেলা বিলীন হয়ে যাবে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিদিন পদ্মা নদীর ডান তীর তথা নড়িয়া উপজেলার পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়ন ভাঙনে পড়ছে। কেদারপুর ইউনিয়নটির বেশি ক্ষতি হচ্ছে। গত সোমবার বিকালে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পুরাতন ভবনটিও যেকোনো মুহুর্তে নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্ন ঘটবে। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মনির আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটি ছেড়ে আমরা আবাসিক ভবনে বসে রোগীদের সেবা দিচ্ছি। আর যেসব রোগীর জরুরি চিকিৎসা দরকার তাদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।