পদ্মায় মাথা তুলছে স্বপ্নের সেতুর পিলার
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। জাজিরা পয়েন্টে নদীর বুকে পিলার এখন দৃশ্যমান।
অনেক দিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে একদম পানির নিচে চলছিল সেতুর কাজ। রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করার সময়ই শুধু পদ্মার বুকে বৃহৎ সব যন্ত্রপাতির ভাসতে দেখা বা নদীর পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখাই ছিল সেতুর কাজের অংশ। পদ্মার ঘোলা জল ছুঁয়ে থাকা এপার-ওপার কোথাও নজরে আসতো না সেতুর কোনো অংশ। উদগ্রীব মানুষের স্বপ্নের পালে যেন এবার নতুন করে হাওয়া লাগলো পিলারগুলো। যেন পদ্মার বুক ভেদ করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু।
পদ্মা নদীর দুই পাড় ও নদীর মাঝে সেতু নির্মাণে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দিনরাত চলছে কাজ। গত কয়েক মাস ধরেই আর পদ্মার বুকে ভাসছে বড় বড় ক্রেন ও ভারী যন্ত্রপাতি। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পদ্মার তলদেশে পাইলিং ও পিলার নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা ছাড়াও কয়েক হাজার শ্রমিক দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মূল পিলার সংখ্যা ৪২টি। নদীর মধ্যে থাকবে ৪০টি আর উপরে থাকবে দুইটি। এছাড়াও বাইরে সংযোগ সেতুর জন্য থাকছে আরও ২৪টি পিলার। নির্মাণাধীন এসব পিলার নির্মাণের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর পিলারের মধ্যে জাজিরা পয়েন্টে থাকছে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলার। এসব পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষে ক্যাপ বসানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব পিলারের ওপার বসানো হচ্ছে তিন হাজার টন ওজনের ১৫০ মিটার দীর্ঘ ইস্পাতের স্প্যান। আর এই স্প্যানের মাধ্যমেই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু! এসব স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরা পয়েন্টে আনার জন্য চার হাজার টন ক্ষমতার একটি ক্রেনও রয়েছে পদ্মায়।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এ সেতু জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে সেতু সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা আশা করছেন।
দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে বহু ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আর মিথ্যা অভিযোগের পর। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। চুক্তি করে বিশ্বব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ এনে ২০১২ সালে প্রথমে বিশ্বব্যাংক এবং পরে অন্য সংস্থাগুলো সরে যাওয়ার পর সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।
তবে সরকার শুরু থেকেই দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগকে চক্রান্ত বলে আসছিল। আর বিশ্বব্যাংক অধ্যায় শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিজ অর্থেই সেতুর কাজ শুরু করে সরকার। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা।
এ সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে, প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে বলে আশা করছে সরকার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন