পবিত্র জুমআতুল বিদা আজ

আজ রমজান মাসের শেষ জুমআ। পবিত্র জুমআতুল বিদা। এ দিনকে ইবাদতের মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক মানুষের ধারণা, এর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে। ফলে তারা এ জুমআ আদায়ের জন্য এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে আগেভাগে গিয়ে উপস্থিত হয়। আসলেই কি তাই?

ইসলামি শরিয়তে জুমআতুল বিদা বলে আলাদা কোনো ফজিলতপূর্ণ দিন নেই। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমআর দিনের গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আর রমজানের কারণে জুমআর দিনের মর্যাদা আরও বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) এ বিশেষ দিনটিতে মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মসজিদে মসজিদে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়।

তবে রমজান মাসের শেষ জুমআ হিসেবে এদিন ‘আল-কুদস দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। মানুষ দলে দলে জুমআ আদায় করতে মসজিদের দিকে ধাবিত হবে। মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম উম্মাহ আজ জুমআর নামাজ শেষে মহান আল্লাহ’র কাছে বিশেষ দোয়া করবেন।

১৪৪২ হিজরির রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহ ইতিমধ্যে তিনটি জুমআ অতিবাহিত করেছেন। আজ রমজানের বিদায়ী জুমআ। তাই কুরআন নাজিলের মাসের মর্যাদা ও বরকতের সঙ্গে জুমআর মর্যাদা ও ফজিলতে মুমিন রোজাদারের আমল ও হৃদয় হোক আলোকিত।

জুমআতুল বিদার বিশেষ ফজিলতের কথা না ভেবে যেহেতু আজই রমজানের শেষ জুমআ তাই জুমআ আদায়ে কুরআন-সুন্নাহ ঘোষিত ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের জন্য জরুরি। জুমআর নামাজের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

হজরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জুমআর নামাজে উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছাকাছি হয়ে দাঁড়াও। কেননা যে ব্যক্তি জুমআর নামাজে সবার পেছনে উপস্থিত হবে, জান্নাতে প্রবেশ ক্ষেত্রেও সে সবার পিছনেই পড়ে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

সুতরাং জুমআতুল বিদা উপলক্ষ্যে অন্তত রমজানের শেষ জুমআয় আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হয়ে এ হাদিসের ওপর আমল করে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করাও জরুরি।

তাছাড়া মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমআর দিনটি সপ্তাহিক ইবাদতের বিশেষ দিন। অনেকে এ দিনটিকে গরিবের ঈদ হিসেবে গণ্য করে। এ দিনের ফজিলত এমনিতেই বেশি। তবে রমজানের শেষ দশকে হওয়ার কারণে এ জুমআর সঙ্গে শেষ দশকের ফজিলতও যোগ হয়েছে। জুমআর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমআর দিন। এই জুমআর দিনেই হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং জুমআর দিনই তাকে জান্নাত দান করেন এবং জুমআর দিনেই তাকে জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন এবং কেয়ামতও এই জুমআর দিনেই অনুষ্ঠিত হবে।’ (মুসলিম)

পাঁচ শ্রেণির লোক ব্যতিত জুমআর নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। তারা হলো-
– ক্রীতদাস;
– স্ত্রীলোক;
– অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক;
– মুসাফির এবং
রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)

জুমআ নামাজ না পড়ার পরিণাম-
– রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমআ বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমআ ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক, নতুবা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। (মুসলিম)

– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা এই রকম- যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমআ পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।

সুতরাং আমরা জামআ`র নামাজ পরিত্যাগ না করে সবার আগে আগে রমজানের শেষ জুমআর নামাজ তথা জুমাআতুল বিদা আদায় করতে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। বিগত জীবনের ভুল-ভ্রান্তি ও গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।

সতর্কতা
ইসলামের প্রাথমিক যুগেও জুমাআর প্রচলন ছিল। সে সময় জুমআর দিনকে ইয়াওমে আরুবা বলা হতো। যা ইয়াহুদি, খ্রিস্টান তথা জাহেলি সম্প্রদায়ের লোকেরা পালন করতো। তারা জুমআর দিনে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, আমোদ-ফুর্তির আসর বসাত। এই ছিল তাদের জুমআর সংস্কৃতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন মুসলমানকে এ ধরনের উৎসব থেকে হেফাজত করুন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সারা দেশে দোয়া আহবান
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মানুষের সুরক্ষা, অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য লাভ, মহামারি পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করে আজ ২৪ রমজান ১৪৪২ হিজরি পবিত্র জুমাতুল বিদা নামাজ শেষে দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দেশের সকল মসজিদের খতিব, ইমাম, মুসল্লিদের ও মসজিদ কমিটিকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই উপলক্ষে দেশের অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিজ নিজ ধর্ম মতে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের শেষ জুমআ আদায়ের মাধ্যমে নিজেদের বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ববাসীকে হেফাজত করুন। জুমআর ফজিলত ও মর্যাদাকে রমজনের ফজিলতের সঙ্গে বাড়িয়ে মুমিনের সব আমলকে কবুল করার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে হেদায়েতের আলোতে ভরপুর করে দিন। আমিন।