পরমাণু দুনিয়ায় আরেক পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ
স্বপ্নের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজও শুরু হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শনিবার পাবনার রূপপুরে এই নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যেখানে প্রায় সব প্রকল্পেই নির্ধারিত সময়ে পেছনে থাকে, সেখানে এই কাজটা আবার চার মাস আগেই শুরু হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত থাকতে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ শুক্রবারই এসেছেন বাংলাদেশে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দেশগুলোর ক্লাবের (বিশ্ব পরমাণু ক্লাব) সদস্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা অনুযায়ী মূল নির্মাণকাজ শুরুর আগে এই লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গত বছরের ২১ জুন বিএইআরএ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের লাইসেন্স দেয় এবং ৪ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের নকশা এবং নির্মাণ কাজের লাইসেন্স দেয়। আর ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইউনিটের মূল নির্মাণ কাজের (এফসিপি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তি অনুসারে এটি নির্মাণের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর সময় পাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে কেন্দ্রটির এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলে একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা।
এ প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর-১২০০’ প্রযুক্তির পরমাণু চুল্লি ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্প ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির ঠিকাদার ইতিমধ্যে প্রকল্প সাইটে কাজ করছে। এছাড়া ভারতের গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপ (জিসিএনইপি) কে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ এবং তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএইসি।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর ভারত ঋণ দেবে এক বিলিয়ন ডলার। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে।
২০১০ সালের ২১ মে পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি হয় মস্কোতে। আর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী যেসব প্রকল্প হাতে নেয়, তার একটি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি থেধকে ষাট বছর ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
রূপপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পটুয়াখালীর পায়রাতেও আরও একটি বড় আকারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের।
আর যেসব প্রকল্প
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন ছাড়াও একই দিনে তিনি পাবনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাবনা-মাঝগ্রাম রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে এছাড়া ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে ঈশ্বরদী থেকে মাঝগ্রাম হয়ে পাবনা পর্যন্ত রেলওয়ে সেকশনে ট্রেন চলাচল; পাবনা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস; ঈশ্বরদী থানা ভবন; জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স; সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, আটঘরিয়া উপজেলার মাঝপাড়া, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, সলিমপুর, লক্ষীকুণ্ডা, সাঁড়া, পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর এবং চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস; ফরিদপুর উপজেলায় বড়াল নদীর উপর নারায়ণপুর সেতু; ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গোমানী নদীর উপর নৌবাড়িয়া সেতু।
এ ছাড়া ঈশ্বরদী ও চাটমোহর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স; সিটি কলেজ, পাবনা এর একাডেমিক ভবন; দেবত্তোর ডিগ্রি কলেজ, আটঘরিয়া এর একাডেমিক ভবন; খিদিরপুর ডিগ্রি কলেজ, আটঘরিয়া এর একাডেমিক ভবন; চাটমোহর মহিলা কলেজ এর একাডেমিক ভবন; বোনকোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সুজানগর এর একাডেমিক ভবন; সুজানগর মহিলা কলেজ এর একাডেমিক ভবন; শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ, সাঁথিয়া এর একাডেমিক ভবন; ঈশ্বরদী মহিলা কলেজ এর একাডেমিক ভবন; সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ এর প্রশাসনিক ভবন; ডেঙ্গারগ্রাম ডিগ্রি কলেজ, আটঘরিয়া এর একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন হবে।
আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; চাটমোহর উপজেলায় গোমানী নদীর উপর নিমাইচড়া সেতু; চাটমোহর উপজেলায় কাটাখাল সেতু; চাটমোহর উপজেলায় আত্রাই নদীর উপর আত্রাই সেতু; সুজানগর উপজেলায় ধোলাইখাল সেতু; ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে সিগন্যালিং-সহ রেললাইন নির্মাণ; পাবনা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ জেলা সদরে এক হাজার শয্যার মিলনায়তন; সুজানগর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; আটঘরিয়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন; চাটমোহর, বেড়া ও সুজানগর উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিস ভবন; জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ভবন; পুলিশ লাইনস মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন; সুজানগর উপজেলায় সাগরকান্দি ইউনিয়ন ও আটঘরিয়া উপজেলায় হাদল ইউনিয়ন ভূমি অফিস; জেলা শিল্পকলা একাডেমি; সাঁথিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ; আদর্শ মহিলা কলেজ, পাবনা এর একাডেমিক ভবন; সাঁথিয়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন; বেড়া পৌরসভায় উচ্চ জলাধার ও পানি শোধনাগার নির্মাণ; সাঁথিয়া পৌরসভায় উচ্চ জলাধার নির্মাণ;।
আওয়ামী লীগের জনসভা
এসব প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভা সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লী ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিদিন চলছে বিশেষ বর্ধিত সভা, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে মিছিল।
প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাপা ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের রাস্তা ঘাট। তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য তোরণ। পুলিশ লাইনস মাঠে তৈরি হচ্ছে বিশাল মঞ্চ।
সব কিছু তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
আয়োজনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পাবনার মানুষের সারাজীবনের স্বপ্নপূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, রেল লাইন সব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের জেলায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরমাণু ক্লাবের সদস্য হওয়ার গল্প পাবনাবাসী সারাজীবন করবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন