পরাজয়ে শুরু টাইগারদের ত্রিদেশীয় সিরিজ
সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন শেখর ধাওয়ান। তার ব্যাটে ভর করে জয়ের ঠিক দোর গোড়ায় চলে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল। শেষ দিকে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ২০ বলে ১৬ রান। এমন অবস্থায় ধাওয়ানকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ভারতীয় এ ওপেনার। অনেকটা ওপরে ওঠা বলটিকে তালুবন্দি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন লিটন।
১৪০ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে অনায়াসেই টপকে গেছে ভারতীয় দল। ৪৩ বলে ৫৫ রান করে শেখর ধাওয়ান বিদায় নিলেও জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলতে সমস্যায় পড়তে হয়নি ভারতকে। প্রথম খেলায় শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে যাওয়া দলটি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে কামব্যাক করে।
শুরুতে অবশ্য ভারতকে বিপদে ফেলেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই কাটার মাস্টারের বলে স্টাম্প ভেঙ্গে যায় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ২৮ রানে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গে দেন মোস্তাফিজ। একই কায়দায় টিম ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় উইকেটও তুলে নেন রুবেল হোসেন। ৪০ রানে রোহিত এবং রিশব রাজেন্দ্র পন্টকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলে কিছুটা স্বস্তির পরশ এনে দেন মোস্তাফিজ-রুবেল।
উইকেট তুলে নেয়ার এই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে সুরেশ রায়নাকে সঙ্গে নিয়ে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ধাওয়ান। ২৮ রানে রায়নাকে ফেরান রুবেল। ইনিংসের শুরু থেকে অসাধারণ খেলে যাওয়া শিখরকে লিটনের ক্যাচে পরিনত করেন তাসকিন আহমেদ। অবশ্য তার আগেই জয়ের কাছা কাছি চলে যায় ভারত। শেষ পর্যন্ত ৮ বল হাতে রেখে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় টিম ইন্ডিয়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুরু হয় ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। এদিন টসে জিতে বাংলাদেশ দলকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারতীয় দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
আগে ব্যাটিং করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ধাওয়ানের ফিফটিতে ভর করে ৬ উইকটে জয় নিশ্চিত করে ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন শেখর ধাওয়ান। এছাড়া ২৮ ও ২৭ রান করে করেন সুরেশ রায়না এবং মনস পান্ডিয়া।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭২ রানে প্রথম সারির এই ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
স্কোর বোর্ডে ২০ রান জমা করতেই সাজঘরের পথ ধরেন এ ওপেনার। উনাদকাটের বলে চাহালের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেয়ার আগে ১২ বলে ১৪ রান করেন সৌম্য। তার বিদায়ের পর সুবিধা করতে পারেননি অন্য ওপেনার তামিমইকবালও।
এরপর লিটন কুমার দাস এবং সাব্বির রহমান রুম্মনরা অনেক চেষ্টা করেও দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১৩৯/৮ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। যেটা সম্ভব হয়েছে লিটন এবং সাব্বিরের ৩৪ ও ৩০ রানের রানের কল্যাণে। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান যা একটু খেললেন। বাকিরা তো আসা-যাওয়ার মিছিলেই ছিলেন।
যুজবেন্দ্র চাহালকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে লংঅফে ফিল্ডিং করা সুরেশ রায়নার হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ৩০ বলে ৪ বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৪ রান করেন লিটন।
টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণের কারণে ভারতের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
শারদুল ঠাকুরের শর্টবলে সুইফ করতে গিয়েউনাদকাটের তালুবন্দি হওয়ার আগে ১৬ বলে ২ চারে১৫ রান করেন বাংলাদেশ দলের এ ওপেনার। ৭ রানে নতুন জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারেননি জাতীয় দলের এই ডেশিং ওপেনার তামিম।
দলের কঠিন পরিণতির দিনে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। বিজয় শংকরের বলে উইকেটের পেছনে থাকা দিনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক। আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নেন মুশফিক। থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেননি ৩১ বছরে ছুঁই ছুঁই এই ক্রিকেটার। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে ১৮ রান করেন তিনি।
সৌম্য তামিম মুশফিকের বিদায়ের পর উইকেটে থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক নিজেও। রানের খাতা খুলতে না খুলতেই বিজয় শংকরের গতির বলে দ্বিতীয় শিকারে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। দলের ব্যর্থতার দিনে উইকেটের এক পাশ আগলে রাখা লিটন কুমারও বিভ্রান্ত হন চাহালের গুগলিতে। রানের চাকা সচল করতে ডাউন দ্যউইকটে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ তুলে দেন লিটন।
এরপর সময়ের ব্যবধানে বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উনাদকাটের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪ বলে ৩ রান করেন মিরাজ। ত্রিদেশীয় সিরিজে যার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল সেই সাব্বির রহমান রুম্মনছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩০ রান করে দলের স্কোর কিছুটা মোটাতাজা করেন। ইনিংস শেষ হওয়ার ৭ বল আগেই বাউন্ডার হাঁকাতে গিয়ে উনাদকাটের বলে ব্যাচ তুলে দেন রুম্মন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৩৯/৮ রান (লিটন ৩৪, সাব্বির ৩০, মুশফিক ১৮, তামিম ১৫, সৌম্য ১৪; উনাদকাট ৩/৩৮)।
ভারত: ১৮.৪ ওভারে ১৪০/৪ রান (ধাওয়ান ৫৫, রায়না ২৮, পান্ডিয়া ২৭*;রবেল ২/২৪)।
ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন