পরিচয় মিলেছে টাইটানিকের বৃদ্ধ দম্পতির
প্রায় ১০৫ বছর আগে ডুবে যাওয়া বৃহত্তম জাহাজ টাইটানিক নিয়ে পরিচালক জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত ‘টাইটানিক’ সিনেমাটির কথা এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে। ক্যামেরনের চোখ দিয়েই বিশ্ববাসী যেন দেখেছিল ১৯১২ সালের সেই ভয়ংকর রাতে কী ঘটেছিল।
‘টাইটানিক’ সিনেমায় দেখা গেছে, টাইটানিক যখন ডুবে যাচ্ছিল, তখন অনেক যাত্রীই প্রিয়জনকে ছেড়ে যাননি, একা বাঁচতে চাননি। তেমনি যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। জাহাজে বিপদঘণ্টা বেজে চলেছে। যাত্রীরা সবাই বাঁচার আকুতিতে ছোটাছুটি করছেন। কিন্তু ওই বৃদ্ধ দম্পতি প্রথম শ্রেণির কেবিনের বিছানায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন। জাহাজে ঢুকে পড়া সমুদ্রের পানি ধাক্কা দিচ্ছে তাঁদের বিছানায়। কিন্তু এতে তাঁদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নেই কোনো বাঁচার আকুতি। বেঁচে থাকার চেয়ে যেন এমন পরিস্থিতিতে একে অপরকে জড়িয়ে থাকাটাই তাঁদের পরম সুখের।
এ তো ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া অস্কারজয়ী ‘টাইটানিক’ সিনেমার দৃশ্য। ১০৫ বছর আগের সেই টাইটানিকে এমন বৃদ্ধ দম্পতি ছিলেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। জাহাজে থাকা যাত্রীদের অনেকের পরিচয় জানা গেলেও সিনেমাটি মুক্তির দুই দশকেও ওই দম্পতির পরিচয় জানা যায়নি। তবে এবার ওই বৃদ্ধ দম্পতিরও পরিচয় মিলেছে। শুধু সিনেমায় নয়, সত্যিকারের ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজে এমন এক দম্পতি ছিলেন।
নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, টাইটানিকডুবির প্রায় ৪১ বছর আগে ওই দম্পতির বিয়ে হয়। ওই বৃদ্ধের নাম ইসিডর স্ট্রাউস (৬৭) ও বৃদ্ধার নাম ইডা (৬৩)। ছয় সন্তানের বাবা-মা মার্কিন এই দম্পতি ফ্রান্সে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। ইসিডর যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিক ছিলেন। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক সদস্য ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধি ছিলেন। সম্প্রতি ইসিডর ও ইডার প্রপৌত্র পল কুর্জম্যানের পরিচয় জানা গেছে। পরে তিনিই এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পল কুর্জম্যান এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ইসিডর ও ইডার মেয়ে সারা তাঁর দাদি। এই দাদির কাছেই তিনি এসব ঘটনা জেনেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম শ্রেণির কেবিনের যাত্রী হওয়ার সুবাদে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় ইডাকে লাইফবোট নিয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্বামী ইসিডরের জন্য কোনো লাইফবোট বরাদ্দ না থাকায় ওই চরম মুহূর্তেও তিনি স্বামীকে ফেলে একা চলে যেতে চাননি। সে সময় ইডা তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘ইসিডর, আমরা একসঙ্গে অনেক বেঁচে থেকেছি। আমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসি। তাই চলো, মৃত্যু পর্যন্ত একসঙ্গেই থাকি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এর পরেই টাইটানিক ডুবে যাওয়া পর্যন্ত কেবিনের বিছানায় ওই বৃদ্ধ দম্পতি একে অপরকে নির্বিকারভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।
পল কুর্জম্যান জানিয়েছেন, দ্য ম্যাকায়-বেনেট জাহাজের সাহায্যে ইসিডরের মৃতদেহ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে ইডাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে সময় নিউইয়র্কে ইসিডরের শেষকৃত্যের আগে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তাঁকে ব্রনক্সের উডলন সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়েছে।
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বরফের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় টাইটানিক। ধারণা করা হয়, জাহাজে প্রায় ছয় হাজার যাত্রী ছিলেন। এঁদের মধ্যে দেড় হাজারেরও বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন