পরিবেশ সুরক্ষায় গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ৮ বিশিষ্ট নাগরিক

চলমান দেশের বন্যা পরিস্থিতি নদী সুরক্ষার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। নদীর দখল দূষণের পাশাপাশি নাব্যতা সংকট দৃশ্যমান। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে নদী খননের জন্য এক হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রদান করা হয়। কিন্তু বাজেটের টাকা নদী খনন করার পরিবর্তে হরি লুট করা হয়েছে।

বিশেষ করে নদী খননের জন্য নদী বড় করার পরিবর্তে নদীর দুই পাশকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনসচেতনতা তৈরি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরতে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন, গবেষক ও গণমাধ্যম কর্মীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

প্রতিবছর সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পরিবেশ খাতে অবদান রাখায় বিশিষ্ট নাগরিকদের গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে আসছে। এ বছর পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখা ৮ বিশিষ্ট নাগরিককে আগামী ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং রবিবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ২য় তলার জহুর হোসেন মিলনায়তনে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে। ৮ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন ৪ গবেষক ও ৪ গণমাধ্যম কর্মী।

ডক্টর মুজিবুর রহমান হাওলাদার যিনি বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে নদী শাসন, নদী পুনরুদ্ধার ও দূষণের কবল থেকে রক্ষা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বাজেট ও ক্ষমতা পর্যাপ্ত না থাকায় কিছুটা সফল হয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ফিরোজ জামান দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ রক্ষায় গবেষণা করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ গোলাম সরোয়ার পরিবেশ বিষয়ক আইন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন।

আশিকুর রহমান সমী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে সদ্য গবেষণা শেষ করে স্বাধীন গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার গবেষণার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে হাওর, বাওর, উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, বন্যপ্রাণী গবেষণায় নতুন নতুন ধারণা তৈরির মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করছেন।

এস এম মফিউর রহমান একুশে টেলিভিশনে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন। দীর্ঘ সময় পরিবেশ সংক্রান্ত নিউজ গণমাধ্যমে রিপোর্টিং করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক, নদীর দখল ও দূষণ রোধে জনসচেতনতা তৈরি, বৃক্ষ নিধন নিয়ে জনপ্রিয় অনেক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

ফেরদৌস রহমান এটিএন নিউজে পরিবেশ সাংবাদিক হিসেবে বেশিরভাগ সময় কাজ করে থাকেন। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত নদীর দখল দূষণ ও পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সংবাদ তৈরি করে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম মিঠু বিগত সময়ে বৈশাখী টেলিভিশনে কর্মরত ছিলেন বর্তমানে প্রতিদিনের বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন। এছাড়াও আলাদাভাবে সাপ নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি জলজ, বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছেন গড়ে তুলেছেন বেঙ্গল ডিসকভার নামে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা। তিনি কয়েক বছর পরিবেশ সাংবাদিকতা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, প্রতিবছর আমরা চেষ্টা করি যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করতে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মূল্যায়ন তৈরি হলে আগামীর বাংলাদেশ হবে আরো বেশি সমৃদ্ধ ও জ্ঞান নির্ভর। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে গবেষণা ভিত্তিক বাজেট কম থাকায় দিন দিন মেধা শূন্য হয়ে পড়ছে জাতি।

উন্নত রাষ্ট্রগুলো গবেষণা খাতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন যা আমাদের দেশে উল্টো। বর্তমান সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি বন,পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বাজেট পর্যাপ্ত করার জন্য।