পরীক্ষা কেন্দ্রে সহানুভূতিশীল হতে আবদার জানিয়ে চিঠি, রংপুর জুড়ে তোলপাড়

পরীক্ষার কেন্দ্রে সহানুভূতিশীল হতে আবদার জানিয়ে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রংপুরের বদরগঞ্জে এইচএসসি ২০২৩ ব‍্যাচের শিক্ষার্থীর পক্ষে এ চিঠি দেওয়া হয়। বদরগঞ্জ সরকারি কলেজ পরিক্ষা কেন্দ্রে এবছর ৪৫৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪৫৬ জন শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনে এমন একটি চিঠি পেয়েছেন বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।চিঠির প্রেরক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তার কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নাম। এই চিঠি নিয়ে অনেকটা তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে রংপুরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে দুই পাতার এই চিঠি।

চিঠিতে লেখা আছে, প্রথমে সালাম নেবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমরা বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি ও বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের সব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলছি। আমাদের বদরগঞ্জে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র দুটি। আমরা বিগত বছরের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনে আসতেছি যে উভয় কেন্দ্রেই পরীক্ষার ভিউটি অত্যন্ত কড়া হয়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক আতঙ্কিত থাকে। ডিউটিরত শিক্ষক মহোদয়রা শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো রকম সহানুভূতিশীল হয় না। যার ফলে উভয় কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল অনেক খারাপ হয়। পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণে ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি না। কঠিন ডিউটির কারণে শিক্ষার্থীরা পারস্পারিক সহযোগিতার কোনো সুযোগ পায় না।তথাপি পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেলসহ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগই পাই না। বিগত কয়েক বছর থেকে উভয় কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি।তাই আমরা আপনার সহায়তা কামনা করছি। যাতে পরীক্ষায় ডিউটিরত শিক্ষকরা আমাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হয়। যাতে আমরা বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের গর্বের কারণ হতে পারি।

জানা গেছে, বদরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষকে দেওয়া চিঠিটি রেজিস্ট্রি করে পাঠানো হয়েছে। খামের উপরে কোনো নাম না থাকলেও এতে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। খামে উল্লেখ করা নম্বরে ফোন করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে একব‍্যক্তি রিসিভ করে বলেন তিনি নোয়াখালীতে থাকেন। তবে তার নাম-পরিচয় বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে এই চিঠি কারা দিয়েছেন, কেনো দিয়েছে এসব বিষয় নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। তাছাড়া বিষয়টি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদকে অবগত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, লেখাপড়া থেকে বিমুখ শিক্ষার্থীরা এ কাজ করেছে। প্রেরক নিজেকে ছাত্র নেতা পরিচয় দিয়েছে। আমরা তাদের খোঁজার চেষ্টা করছি। চিঠির খামে একটা মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে। হাতের লেখা আমরা যাচাইয়ের চেষ্টা করব। আপাতত চিঠিটা সংরক্ষণে রেখেছি। যারা এটা করেছে আমি তাদের হাজির খুঁজে বের করবো।এমন চিঠির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, বদরগঞ্জ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ এমন চিঠি পাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানান। এমন আবদার করে চিঠির ঘটনা আমাদের অবাক করেছে।কারণ শিক্ষার্থীরা এই বয়সে যদি এমন অসৎ চিন্তা করে সেটা ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এমন বিষয় যাতে করে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন,হয়তো শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে এমন কাজ করেছে। তবে কোনোভাবেই পরীক্ষায় কোনো ধরণের নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই।