পাকিস্তানে কি এবার ‘গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান’ ঘটবে!

বুধবার ১১তম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবে পাকিস্তানের জনগণ। ভোট গ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবারও দেশটির নিরঙ্কুশ গণতন্ত্রের স্বপ্নকে অনেক দূরের একটি ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে।

২৭২ আসন পেলে নানা কারণে আলোচিত পাকিস্তানের মসনদে বসবে সেই রাজনৈতিক দল। এবারের নির্বাচনে ১৭১ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩ লাখ ৭১ হাজার সেনাসদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের ফল বলছে, পাকিস্তানে ভোটের আগাম হিসাব-নিকাশ করাটা বেশ কঠিন। কারচুপি করে হয়তো কোনো দলকে জিতিয়ে আনা যায়, কিন্তু নির্বাচনের ফল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর গত সাত দশকের ইতিহাসে পাকিস্তান কখনো আপাতদৃশ্যের গণতন্ত্র, আবার কখনো পুরোমাত্রার সামরিক শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়েছে। এবারের নির্বাচন সামনে রেখে এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা কারও কারও মতে ‘গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের’ মতোই।

বরাবরের মতো এবারও সন্দেহের কেন্দ্রে রয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাই এর প্রমাণ। প্রথম ঘটনাটি ঘটে আদালত যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ বেছে বেছে বিদায়ী সরকারের কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেন। কোনো কোনো আইন বিশেষজ্ঞের অভিযোগ, বিরোধীদের সুযোগ করে দিতে আদালত এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর এর পেছনে আছে সেনাবাহিনীর ভূমিকা।

ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকির বক্তব্য ওই অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়। রাওয়ালপিন্ডি বার অ্যাসোসিয়েশনে গত রোববার তিনি বলেন, আইএসআই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আদালত ৫০ ভাগ দায়ী। নওয়াজকে যেন নির্বাচনের আগে মুক্তি দেওয়া না হয়, সে জন্য বিচারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সংস্থাটি। দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ক্ষমতাচ্যুত হন নওয়াজ। নিম্ন আদালত তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবার।

তৃতীয়ত, ভোট পরিচালনার জন্য নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ব্যাপক ক্ষমতা।

এরই মধ্যে কিছু কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে। নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) অনেক প্রার্থীকে দল ত্যাগ করে হয় সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফে (পিটিআই) যোগ দিতে নতুবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে টোপ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা টোপ গেলেননি, তাঁরা নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিও চাপে রয়েছে। এই দলের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আবারও নতুন করে উঠেছে। বামপন্থী আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য পেশোয়ারে গত সপ্তাহে হামলায় নিহত হন। একই ধরনের হামলায় আরও দুই প্রার্থী নিহত হয়েছেন, যাঁদের একজন পিটিআইয়ের সদস্য। তথ্যসূত্র: বিবিসি।