পাকিস্তানে তোলপাড় ফেলা কে এই আসিয়া বিবি?
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার রায়ে অভিযুক্ত আসিয়া বিবি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খালাস পাওয়ার পর তাকে নিয়ে দেশটিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যা পাকিস্তনের গণ্ডি পেরিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে বহির্বিশ্বেও। প্রাণের ভয়ে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে তিনি পালিয়েছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। তা কে এই আসিয়া বিবি?
তার আসল নাম আসিয়া নওরীন। জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্চাব প্রদেশের শেইখুপুরা জেলার ইথান ওয়ালি নামের ছোট্ট একটি গ্রামে। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী আসিয়া পরিবারের সাহায্যের জন্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার স্বামী ছিল ইটভাটার শ্রমিক। পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়া বিবির পরিবারটিই ছিল ওই গ্রামের একমাত্র খ্রিস্টান পরিবার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর, কারাগারে যাওয়ার আগে নাকি তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ২০০৯ সালের জুনের। আসিয়া বিবি একদল নারীর সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ করতেন। এসময় এক বালতি পানি নিয়ে দলের অন্য নারীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। আসিয়া বিবি বালতি থেকে এক গ্লাস পানি নেন। এ নিয়ে দলের অন্য নারীরা তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আসিয়া বিবি মুসলিম নন, সেজন্য তিনি মুসলিমদের বালতির পানিতে গ্লাস ডুবিয়ে পানি তুলতে পারেন না। ঝগড়ার এক পর্যায়ে হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি। এই অভিযোগ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিচারিক আদালতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে বছর পর লাহোরের হাইকোর্টও আসিয়ার বিরুদ্ধে সেই রায়কেই বহাল রেখেছিলেন। পরে আসিয়া বিবিকে খালাস দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার, আসিফ সাইদ খোসা ও মাজহার আলম খান মিয়ানখেল আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ম অবমাননার দায় থেকে তাঁকে রেহাই দেন। রায় ঘোষণার সময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বলেন, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ও দোষী সাব্যস্তকরণের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত হয়েছে।
এই রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর সমর্থকেরা। মুক্তি পেলেও দেশজুড়ে বিক্ষোভের পরিপেক্ষিতে তাকে কারাগারেই থাকতে হয়েছিল। এমনকি ইসলামপন্থি সংগঠনগুলোর চাপের মুখে সরকার তার পাকিস্তান ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অবশেষ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ইউরোপগামী কোনো বিমানে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তবে তিনি আসলে কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তা জানা যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন