পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ
বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নদী ভাঙন এবং ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া মানুষ চরম কষ্টে আছেন। অনেক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাঁধে অবস্থান করছেন। ত্রাণ সহায়তাও অপ্রতুল।
খবার পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। নদী ভাঙন নতুন সংকট তৈরি করছে।
এবার ২৪ হাজার ১৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এপর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ৪১ জন।
মোট ৩৩ জেলা এবার বন্যা কবলিত হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এখনো ১৭টি জেলাকে বন্যা কবলিত বলছে। তাদের হিসেবে এখনো প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। ৭৪ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ৪০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এবার বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ৩৩। উপজেলা ১৬১। ইউনিয়ন এক হাজার ৬২। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা নয় লাখ ৫৩ হাজার ৯৪০। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ২৭ জন।
উত্তরের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলার একটি হলো কুড়িগ্রাম। সেখানকার চিলমারি উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ। তিনি জানান, তার এলাকায় ছয় হাজার পরিবারে মধ্যে তিনশ’ পরিবারের ঘরবাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও অনেক বড়িঘর। আর ফসলি জমির ২৫ ভাগে বালু জমে গেছে। সামনে সেখানে ফসল ফলানো কঠিন হবে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। আর পানীয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ সহায়তা তেমন নাই। এনজিও গুলো এগিয়ে আছেনা। সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের আগে তিন হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়ছে।’
ওই এলাকার নদী ভাঙনের শিকার এবং যাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে তারা এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। যার ফিরেছেন তারা ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছেন না। দেশের অন্যান্য বন্যা কবলিত এলকার চিত্রও কম বেশি একই রকম।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত কমছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। মধ্যাঞ্চল এবং ঢাকার ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে। এখন যে বৃষ্টির পানি তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ। উজানে আসাম ও মেঘালয়ে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি নেই।
ঢাকার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, আগামী তিন-চার দিন আরো বৃষ্টিপাত হবে। তবে তা হবে থেমে থেমে। এরপর স্বাভাবিক মাত্রার মৌসুমি বৃষ্টিপাত হবে। উজানে বৃষ্টিপাত না থাকায় নদীর পনি কমছে বলে জানান তিনি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে দেশের ৭২টি নদীর পানি কমছে। ২৪টি নদীর পানি এখনো সামান্য বাড়ছে। আর অপরিবর্তিত আছে পাঁচটি নদীর পানি। ১৭টি নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে। এরমধ্যে আছে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, আত্রাই, যমুনা, তিতাস, মেঘনা, পদ্মা, তুরাগ, ধলেশ্বরী প্রভৃতি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, এপর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকায় ১৪ হাজার ৪১০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হয়েছে তিন কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার। শুকনা খাবার প্যাকেট এক লাখ ৫২ হাজার, গোখাদ্য কেনার জন্য দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য এক কোটি ১০ লাখ ঢাকা, গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি ৯০ লাখ টাকা এবং ৩০০ বান্ডেল ঢেউটিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি এখনো বিলি করা হয়নি। -ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন