পাবনায় পেঁয়াজের খেতে সাথি ফসল, দ্বিগুণ লাভ

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কয়রাবাড়ী, মতিগাছা, পুস্তিগাছা, জুমাইখিড়ি, চত্রারবিল, শ্রীপুর, দেবোত্তর, একদন্ত, লক্ষীপুর, চাঁদভা, মাজপাড়া পৌরসভাসহ বিভিন্ন গ্রামে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের জন্য রোপণ করা হচ্ছে কন্দ বা বীজ পেঁয়াজ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের জন্য রোপণ করা হচ্ছে কন্দ বা বীজ পেঁয়াজ। সেই জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে রোপণ করা হয় অন্য বীজ।

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত এসকল এলাকায় আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়েছে। এই আবাদ করতে গিয়ে অনেক কৃষকই এখন পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে একই জমিতে পটোল, যব, বাঙ্গি, ফুলকপি, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। এতে কৃষকের দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য, এবার আটঘরিয়ায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো হবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ।

কয়েকজন কৃষক বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের সময় জমি পরিচর্যা করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বীজ হিসেবে কন্দ পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। সেই কন্দ বা বীজ পেঁয়াজ থেকে পরিপূর্ণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হতে প্রায় আড়াই মাস সময় লাগে।

জমিতে কন্দ পেঁয়াজ রোপণের সময় প্রতিটি সারির মধ্যে যে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকে, তার মধ্যেই কৃষকেরা নেপিয়ার ঘাস, যব, পটোল, বাঙ্গিসহ পছন্দমতো কোনো ফসলের বীজ বুনে দেন।

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের পর সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে তা তোলার উপযোগী হয়। তবে পেঁয়াজের বাজার দর ভালো থাকলে কৃষকেরা ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে যান। জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নেওয়ার পর এর সঙ্গে লাগানো সাথি ফসল সেখানে বড় হতে থাকে।

এভাবে একই সঙ্গে একাধিক ফসল আবাদে কোনো ফসলেরই ক্ষতি হয় না। বরং কৃষকেরা এক পরিশ্রমে একই জমি থেকে একাধিক ফসল পান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাত-আট বছর আগে পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের লাভ থাকত খুব কম। তাই কৃষকেরা লাভ বাড়ানোর জন্য সেই সময়ে পেঁয়াজের সঙ্গে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেন।

এ ধরনের আবাদে একই খরচ ও পরিশ্রমে কৃষকের দুটি ফসলের লাভ হতে থাকে। এর ফলে কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতির আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এভাবে এর ব্যাপকতা ও জনপ্রিয়তা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে।

সরেজমিনে উপজেলার সুতির বিল এলাকার ফসলের মাঠে দেখা যায়, ফরিদ হোসেন, কাওসার আলম দুই বিঘা জমিতে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাচ্ছিলেন। একদল শ্রমিক সারি বেঁধে কন্দ পেঁয়াজ রোপণ করছিলেন, আর অন্য শ্রমিকেরা সেই সারির ফাঁকে ফাঁকে রোপণ করছিলেন।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে নেপিয়ার ঘাস চাষে সফলতা দেখে চার-পাঁচ বছর ধরে এই দুই ফসল একই জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। এভাবে দুটি ফসলের কোনোটির ফলনেই কোনো ক্ষতি হয়নি বরং তিনি প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজও পাচ্ছেন, আবার আগের পরিমাণে ঘাসও পাচ্ছেন।

কেমন লাভ থাকবে, জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রতি বিঘায় বীজ হিসেবে ছয় থেকে সাত মণ কন্দ পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। এবার দাম বেশি হওয়ায় এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬০ হাজার টাকার কন্দ বীজ লেগেছে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে অন্যান্য খরচ ১০ হাজার টাকা যোগ করা হলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

তিনি এবার কমপক্ষে প্রতি বিঘায় ৪৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছেন। বর্তমান বাজারদর (গড়ে প্রতি মণ পাঁচ হাজার টাকা) অনুযায়ী এর দাম সোয়া দুই লাখ টাকা। আবার পেঁয়াজ ওঠার সময় প্রতি মণের দাম যদি তিন হাজার টাকায়ও নেমে আসে, তাতেও তাঁর উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ার কথা। এরপর ঘাসের লাভের হিসাব তো আলাদা রয়েছেই।

এদিকে উপজেলার অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, জমি পরিচর্যা করে তাতে পেঁয়াজের সাথি ফসল হিসেবে উপজেলার গোড়রী, আর্য্যপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল, শামীম আহমেদ, সাব্বির বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজের সঙ্গে মরিচের আবাদ কইর‌্যা ভালো লাভ পাইছি। তাই এবারও পেঁয়াজের সাথি ফসল হিসেবে মরিচ আবাদ করব।’

আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব আল মারুফ বলেন, ‘পেঁয়াজের সঙ্গে সাথি ফসলের আবাদ বেশ লাভজনক একটি কৃষি পদ্ধতি। আমরা কৃষকদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।