পাবনায় বিপুল পরিমাণ টাকাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকৌশলী আটক
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ দুই উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পালিয়ে যান স্থানীয় ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদের পাবনা সদর থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।
আটকরা হলেন- দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯) ও কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন (৪২)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অনুসন্ধানের কাজে যান কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক। উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে থাকা অফিস সহকারী বাধা দেন। পরে বাধা অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। ভেতরে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখতে পান। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা। এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক হাজির হন। সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশকে খবর দেন তারা।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) খবর দেয়। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
তানভীর আহমেদ দীপ নামে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক ঠিকাদার বলেন, আটক দুজন হয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারে। কারণ তারা মাত্র কয়েক মাস আসছে। এত দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধা মতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছে।
আনিছুর রহমান মারুফ আরেক ঠিকাদার বলেন, প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেওয়া হলে কাজে বিল আটকে দেওয়া হয়।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছে। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম না। ঘটনা শোনার পরে আমি এসেছি। কারা কী কারণে সেখানে টাকা নিয়ে গেছে সেটি আমি জানি না। পুলিশ ও দুদক কাজ করছে। তদন্ত করে বের করতে হবে। তারা যদি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আইনগতভাবে বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাবনা সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন আলী বলেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ভাই আমাদের ফোন কল করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসছি। এখন তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করবে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের পাবনা শাখার উপপরিচালক খাইরুল হক বলেন, মূলত: পুলিশ এখানে অভিযানে আসে। ঘটনায় সহযোগিতার জন্য আমাদের ডেকেছিল। আমরা বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। মামলা হওয়ার পরে দুদকের কাজ শুরু হবে। তখন দুদক অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা বের করার চেষ্টা করবে। তখন সব তথ্য উপাত্ত সাংবাদিকদের দেওয়া হবে। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন