পাবনায় শীতের সবজিতে হাসছে সবুজ মাঠ
পাবনা জেলা দেশের অন্যতম বৃহত্তম সবজি উৎপাদন এলাকা বলে খ্যাত। জেলার ঈশ্বরদীতে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। প্রতিবছর রবি মৌসুমের শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করে কম-বেশি লাভবান হওয়া যায়। যা মৌসুমের অন্য সময় চাষাবাদ করলে নাও হতে পারে। জেলার আটঘরিয়া, ঈশ্বরদীর মাঠগুলোতে এখন রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজিতে মাঠে মাঠে সবুজের হাসি।
ঈশ্বরদী উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে কিছু জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। শীতকালীন সবজিতে ঈশ্বরদীর মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। কেউ ক্ষেতে সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। সব মিলিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাজর, পটল, বেগুন, শিম, টমেটো, লাল ও পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে মাঠ।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এলকার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা যায়, রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন কর্মব্যস্ততা। ভাড়ইমারী, নওদাপাড়া, মুনসিদপুর, মুলাডুলি মধ্যপাড়া, বাঘহাছলা, সাহাপুর, মিরকামারীসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠজুড়ে এখন গাজর, মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি ও টমেটোর চাষ চলছে।
সকাল-সন্ধ্যা সবজিতে পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ চারা ও বীজ বপণে ব্যস্ত। আবার অনেকেই আগাম সবজি মাঠ থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। মুলাডুলি ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় শিমের চাষাবাদ চলছে। সলিমপুরের ভাড়ইমারী, নওদাপাড়া, মিরকামারী ও সাহাপুর গ্রামে গাজরের চাষ বেশি দেখা গেছে। এছাড়া লক্ষীকুন্ডায় পদ্মার চরাঞ্চলে মুলা, ফুলকপি, টমেটো ও ধনিয়া চাষ বেশি।
এরইমধ্যে অনেক কৃষক শীতকালীন আগাম সবজি চাষ শেষ করে তা হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। এগুলো তুলে ওই জমিতে নতুন করে সবজি চাষে আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আটঘরিয়ার পাঁচটি ও ঈশ্বরদীর সাতটি ইউনিয়নই সবজিখ্যাত হিসেবে পরিচিত। বছরের বারোমাসই রকমারি সবজি ফলান এখনকার কৃষক। মুলাডুলিতে শিম ও ঢ্যাড়স চাষ হয় ধারাবাহিকভাবে।
মুলাডুলির মেহের আলী, সাহাপুরের হাসেম খাঁসহ এলাকার একাধিক কৃষক জানান, রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি আবাদে প্রায় তিনভাগে চাষে নামান কৃষকরা। অনেকেই শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ভাগে শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-বাজারে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন কৃষকরা। এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে শেষভাগে সবজি বেশি উৎপাদিত হলেও ভালো দাম পাওয়া নিয়ে অনেকটা অনিরাপদ থাকে।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল বারি ওরফে কপি বারি জানান, শীতকালীন সবজি আবাদে আবহাওয়ার হেরফের হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা হলে ফসলের ক্ষতি হয়। শীতকালীন সবজি চাষ করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক অল্প সময়ে তা বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মেটানোসহ হাট ও বাজারে বিকিকিনি করা যায় সবজি।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব আল মারুফ জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। এখানে গাজর, মুলা, ফুলকপি, ওলকপি ও শিম চাষ বেশি হয়। এছাড়া টমেটো, ধনিয়া, লাল শাক, পালং শাকের ফলনও ভালো হয়। কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। শিম, ফুলকপি, গাজর ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। গত ১৬ অক্টোবর রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত। সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে এলাকার চাষিরা নিজেরাই অনেকটা অভিজ্ঞ সম্পন্ন। তবুও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি চাষে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন