পাবনার আটঘরিয়ায় নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পিঠা উৎসব

টেবিলে প্লেটে থরে থরে সাজানো নানা রঙের আর নানা স্বাদের পিঠা। পাকান, ভাঁপা, পুলি, চিতই, পাটিশাপটা, নকশি পিঠা, ফুল পিঠা, মাল পোয়া, রস পাকনসহ নাম না জানা হরেক রকম পিঠা। এ যেন রসের মেলা।

নানা স্বাদের বাহারী এসব পিঠা দেখলেই মুখে জল চলে আসবে যে কারো। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে এমনই আয়োজন ছিল পাবনার আটঘরিয়ায় পিঠা উৎসবে।

কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা। যান্ত্রিক জীবনে আর আধুনিকায়নের যুগে নতুন প্রজন্ম কতটুকুই বা জানে পিঠার কথা। গ্রাম-বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোকজ ঐতিহ্যবাহী খাবার ধরে রাখা ও নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ৯ম বারের মতো পাবনায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো পিঠা উৎসব।

আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ৯ম বারের মতো এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে হ্যাপী টেকনোলোজি পরিবার। এবারের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

সোমবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে পিঠা উৎসব উদ্বোধন করেন আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন। হ্যাপী টেকনোলোজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহারুল ইসলাম, আটঘরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাদিউল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংক পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক মিয়া মুহাম্মদ আহসানুল কবির, আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বাসিদ প্রমুখ।

বিভিন্ন নামের পিঠা তৈরী করে নিয়ে উৎসবে অংশ নেন গৃহিণী, শিক্ষার্থী অনেকে। পিঠা উৎসব নিয়ে উচ্ছসিত তারা বলছেন, এতে বাড়ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ফিরে আসবে হারানো গ্রামীণ ঐতিহ্য। এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার দাবি তাদের। উৎসবে বাহারী সব পিঠা দেখে মুগ্ধ হন নানা বয়সী দর্শনার্থীরা।

পিঠা উৎসবে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২শ’ রকমের পিঠা নিয়ে অংশ নেয় অর্ধ শতাধিক প্রতিযোগী। পরে তাদের মধ্য থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

হ্যাপী টেকনোলোজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদ বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের সাথে পিঠার পরিচয় করে দিতে ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই ৯ম বারের মতো এই পিঠা উৎসবের আয়োজন। এর মাধ্যমে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেশীয় পিঠার নাম জানতে পারবে। সেইসাথে যাতে তারা এই প্রযুক্তির যুগে তাদের মায়ের কাছে পিঠার আবদার করে।’

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহারুল ইসলাম বলেন, ‘পিঠার যে কত রকম নাম থাকতে পারে এখানে এসে সেটি জানতে পারছি। এমন আয়োজনকে আমরা সবসময় উৎসাহিত করে থাকি। আগামী দিনগুলোতে আরো সুন্দর ও বড় পরিসরে করতে পারি সে চেষ্টা ও সহযোগিতা থাকবে। যাতে দেশে ও বিশ্বে আমাদের পিঠার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।’

আটঘরিয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, ‘আমরা অনেককিছুই হারিয়ে ফেলছি। এখনকার ছেলেমেয়েরা পিঠা খেতে চায়না। তাদের ঝোঁক চাইনিজ খাবারের দিকে। এমন সময়ে এই পিঠা উৎসব আয়োজন নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। আমরা যেগুলো বাপ-মায়ের মুখে গল্প শুনতাম। এখনকার শিশুরা তার নামই জানে না। আশা করি এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন কিছু শিখবে।

পিঠা উৎসবে সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম।