পাবনার গাজনার বিল ও চলনবিলে অবাধে মাছ নিধন, হুমকির মুখে অভয়াশ্রম
পাবনার সুজানগরে গাজনার বিলে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত মাছের অভয়াশ্রম থেকে নিষিদ্ধ জালে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বাঁশের বেড়া, খোঁড়া জাল ও সোঁতি জাল দিয়ে নিধন করা হচ্ছে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ। এভাবে মাছ শিকারের ফলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গাজনা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম প্রকল্প মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া পাবনার চাটমোহরে চলনবিল এলাকার অনেক খাল ও নদীতে সৌঁতি জাল দিয়ে মাছ নিধন করে চলেছে প্রভাবশালী মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজনার বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁড়া জাল, সোঁতি জাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বস্তাল, শারীরভিটা, খয়রান ব্রিজ এলাকা, বাদাই, উলাট ও হাটখালীতে মাছ ধরছেন অনেকে।
খয়রান গ্রামের পাশে বিলে খোঁড়া জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, এভাবে আমার মতো অনেকেই বিলে ফাঁদ পেতে মাছ ধরছেন।
আরেক মৎস্য শিকারি টিটু আহমেদ বলেন, ‘এসময় বিলে অনেক পানি থাকে, মাছও পাওয়া যায় প্রচুর। মাছ না ধরলে আমরা কী খাবো?’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, গাজনার বিলে বাঁশের খুঁটি, বানা ও খোঁড়া জাল দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ পেতে মাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে মাছের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
গাজনা বিলে কয়েকটি অভয়াশ্রম করতে ব্যয় হয়েছে চার কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভয়াশ্রমগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নদী, খাল ও বিলে মাছ চলাচলের পথে আড়াআড়ি বাঁধ বা স্থায়ীভাবে বেড়া দেওয়া মৎস্য আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া প্রতিবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ ইঞ্চির ছোট নলা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ও শোল) এবং ৩০ সেন্টিমিটারের ছোট বোয়াল ও আইড় মাছ ধরা বা বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। মৎস্য সংরক্ষণ আইনে এ বিধি লঙ্ঘন করলে এক থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা মৎস্য কর্তকর্তা নূর কাজমীর জামান বলেন, গাজনার বিলে অবৈধভাবে মাছ শিকার রোধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ করে তা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, আইন লঙ্ঘনকারী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশীয় মাছ তথা মা মাছ রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে পাবনার চাটমোহরের চলনবিল এলাকায় বেড় জাল দিয়ে নির্বিচারে চলছে মাছ শিকার। স্থানীয়রা বলছেন, এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাইকিং করলেও থেমে নেই মাছ নিধন। চাটমোহর উপজেলার চিকনাই, গুমানী নদী, করতোয়া নদী, আত্রাই নদী, কাটা নদীসহ বিভিন্ন বিলে অবৈধভাবে বেড় জাল, বাঁশের বেড়া, খোঁড়া জাল, সোঁতি জাল ও চায়না দুয়ারি দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন