পাবনার চাটমোহরে পাকা রাস্তার সুবিধা বঞ্চিত সাত গ্রামের বাসিন্দা

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার উন্নয়ন কর্মকান্ড দৃশ্যমান হলেও এখনও এমন কিছু গ্রাম রয়ে গেছে যেখানে পাকা রাস্তার অভাবে লাগেনি উন্নয়নের ছোয়া। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও চাটমোহরের নিমাইচড়া, ছাইকোলা ও হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম উন্নয়নের ছোয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

হান্ডিয়াল ইউনিয়নের নবীন গ্রাম থেকে শুরু করে চরনবীন, লাঙ্গলমোড়া, বরদানগর, বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর-করকোলা হয়ে মির্জাপুর অভিমুখী প্রায় ১০ কিলোমিটার গ্রামীণ উচু নিচু কাঁচা সড়কের কোথাও লাগেনি পিচঢালা ছোয়া। এ ১০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা এইচবিবি করণ করা হলেও বাঁকিপূর্ণ পুরো রাস্তাই এখনো কাঁচা।

৬টি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গুমানী নদী। ছাইকোলা ঘাটে একটি ব্রীজ নির্মিত হলেও লাঙ্গলমোড়া, বরদানগর, বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর গ্রামের মানুষের নদী পারাপারের জন্য কোন ব্রীজ নেই। উপজেলা সদর নদীর অপর প্রান্তে হওয়ায় এ গ্রামগুলোর মানুষকে বর্ষাকালে নৌকা ও সুষ্ক মৌসুমে সাঁকোর উপর দিয়ে পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।

লাঙ্গলমোড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, হান্ডিয়াল ইউনিয়নের নবীন গ্রাম থেকে ছাইকোলা ইউনিয়নের চরনবীন-বরদানগর এবং নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌড়নগর-করকোলা হয়ে যে রাস্তাটি মির্জাপুর পর্যন্ত চলে গেছে এ প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার কোথায় পিচ ঢালাই হয়নি। জৎসামান্য রাস্তা এইচবিবিকরণ করা হলেও তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এ রাস্তায় রিকসা, ভ্যান, সিএনজি চালিত অটো রিকসা, বাস, ট্রাক কিছুই চলাচল করে না। পায়ে হেটে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। এ এলাকার মধ্যে চরনবীন হামিদা মমতাজ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, চরনবীন মাদ্রাসা, লাঙ্গলমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, বরদানগর মাদরাাসা, বিলচলন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে শত শত শিক্ষার্থীকে পায়ে হেটে প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে পায়ে হেটে কোন রকমে যাতায়াত করলেও বছরের প্রায় ছয় মাস রাস্তাটি কাদামাটি থাকে। তখন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টে হাট, বাজার, উপজেলা সদরসহ গন্তব্যে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য রাস্তাটি পাক করণ অতীব জরুরী বলে তারা জানান।

নবীন গ্রামের আরমান হোসেন জানান, গ্রামে চলার মতো কোন রাস্তা নেই। যে কাঁচা রাস্তা আছে বর্ষাকালে সেটিও ডুবে যায়। তখন নৌকাই হয় আমাদের চলাচলের এক মাত্র ভরসা। কয়েক মাস পূর্বে বাঁশের বাঁখারীতে করে অবর্ণনীয় কষ্টে এক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু রাস্তা হয় না। অদ্যবধিও হয়নি।

চরনবীন হামিদা মমতাজ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আকরাম হোসেন, বরদানগর গ্রামের রতন হোসেন, বিন্যাবাড়ি গ্রামের শাহিনুর রহমান রিপন, গৌরনগর গ্রামের জিয়া এবং করকোলা গ্রামের খিতিশ চন্দ্র দাসসহ এলাকার অন্যান্যরা জানান, গুমানী নদীর পাড়ের এ এলাকার রাস্তা ঘাটে উন্নয়নের ছোয়া না লাগায় পরিবর্তন ঘটছে না তাদের জীবন মানের। পাকা রাস্তা না থাকায় এবং নদীর প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক সময় রোগী এবং সন্তান সম্ভবা মাকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিতে পারেন না তারা। জরুরী ভিত্তিতে তারা রাস্তাটি পাকা করণসহ বরদানগর ও বিন্যাড়ি খেয়াঘাটে অন্তত দুইটি সেতু নির্মাণের জোড় দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চাটমোহরে কর্মরত উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, ছাইকোলা থেকে মির্জাপুর জিসি রোড ভায়া বরদানগর-লাঙ্গলমোড়া রাস্তাটি জন গুরত্বপূর্ণ। তবে এ রাস্তাটি এখনো প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হয়নি। তবে প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হলে তখন হয়তো রাস্তাটি করা সম্ভব হতে পারে। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রাস্তার নদীর পশ্চিমপাড়ে ছাইকোলা গ্রামের মধ্যে দেড় কিলোমিটার বেশ আগেই পাকাকরণ করা হয়েছে।