পাবনায় হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল!

পাবনার হাট-বাজার থেকে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। অভিযোগ উঠেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল ভেঙে কেজি দরে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। আবার কিছু দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে প্রিয়জনের জন্য পোশাক কিনতে ক্রেতারা যখন বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় করছেন তখন পাবনা পৌর সদরের শালগাড়িয়া মহল্লার বেসরকারী চাকরিজীবী আব্দুল জলিল সয়াবিন তেল কিনতে দোকানে দোকানে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫ লিটার তেলের বোতল কেনার জন্য শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় দোকানে দোকানে ঘুরলাম। কিন্তু তেল কিনতে পারিনি। পরিচিত এক দোকানীর কাছে অনুরোধ করে এক লিটার তেল কিনে এখন বাড়ি ফিরছি।’
জলিলের মতো শত শত ক্রেতা গত কয়েক দিন ধরে ঘুরে ঘুরেও তেল কিনতে পারেননি। ঈদ যত এগিয়ে আসছে সংকটও তত বাড়ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি কেজি তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন সয়াবিন তেল। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দেখিয়ে হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতি চললেও প্রশাসনের তরফ থেকে নেই কোনো অভিযান বা উদ্যোগ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে চাহিদা বাড়লেও তেল আমদানিকারী কোম্পানীগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডের নান্নু স্টোরের মালিক মন্টু হোসেন জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কোম্পানীগুলো এখন অর্ধেক তেল সরবরাহ করছে। অথচ ঈদের আগে চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে ধরণা দিয়েও চাহিদামতো বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে শহরের রাধানগর এলাকার রাজিউর রহমান জানান, ঈদ এবং আগামী এক মাসের জন্য ৮ লিটার সয়াবিন তেল প্রয়োজন। গত দুই দিন পাবনার বড় বাজার, আব্দুল হামিদ রোডের বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও এক বোতল তেল কিনতে পারিনি। অবশেষে সোমবার এক পরিচিত দোকানীকে অনুরোধ করে ৮০০ টাকায় ৫ লিটারের এক বোতল তেল কিনেছি।
পাবনা শহরের পৈলানপুর মোড়ের খুচরা ব্যবসায়ী টিটু হোসেন জানান, পাইকারী বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। বোতলজাত তেলের সংকট থাকলেও খোলা তেলের সংকট নেই।
এ ব্যাপারে সিটি গ্রæপের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, তার কর্ম এলাকায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ কেস তেল প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন কোম্পানী এ চাহিদা পূরণ করে। হঠাৎ করে খোলা তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ কোম্পানী বোতলজাত তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে।
পাবনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এবিএম ফজলুর রহমান জানান, আকস্মিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই সংকটের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়। তেল কোম্পানীগুলো কারসাজি করে এ সংকট তৈরি করেছে।
পাবনা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম জানান, বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা তেলের দাম বেশি হওয়ায় কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আমরা জানার পর বাজারে মনিটরিং শুরু করেছি।