পাবনা চিনিকল দেড় বছর যাবৎ বন্ধ: নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, আখচাষিরা বিপাকে

পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০০ কোটি টাকা দেনার দায়ে প্রায় দেড় বছর যাবৎ বন্ধ পাবনা চিনিকল। প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পথে প্রতিষ্ঠানটির। চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আন্দোলনের পরও চিনিকল চালুর কোনো উদ্যোগ আসেনি। মিলটি আদৌ চালু হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আখচাষিরা মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন পাবনা সুগার মিলসহ ৬টি মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে চিঠি দেয়। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত মাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে, মিলটি আবার চালু হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিল গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কেউ নেই। চিনিকলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহণের দুই শতাধিক ট্রলি। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।

চিনিকল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউস, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।

চিনিকল ও স্থানীয় আখচাষিরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া নামক জায়গায় ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলটি ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। এটি চালু করতে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি।
চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুণতে থাকে চিনিকলটি। ফলে ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা চিনিকলসহ ৬টি চিনিকলে আখ মাড়াই না করার প্রস্তাব দেয়।

এরপর থেকেই পাবনা চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এতে আখ নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় চাষিদের। বর্তমানে মিলটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০। তাদের বিভিন্ন মিলে সংযুক্ত করা হচ্ছে।

স্থানীয় দাশুড়িয়া গ্রামের আখচাষি সুরুজ বলেন, বন্ধ ঘোষণার সময় চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত আখ কাছের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর চিনিকলে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানায়। কিন্তু গত এক বছরেও সে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে আখ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে চলতি মৌসুমে অনেকচাষি আখের জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এদিকে যারা আখ চাষ করেছেন, তারা আখ বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

বাংলাদেশ চিনিকল আখ চাষি ফেডারেশনের মহাসচিব এবং পাবনা জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বাদশা বলেন, ‘কৃষকদের স্বার্থে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য বন্ধ মিল চালু করা দরকার।’

পাবনা জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু জানান, দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ ঠেকাতে ৫দফা দাবিতে পাবনা সুগার মিলসহ ৬ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষি ফেডারেশন যৌথভাবে চিনিকল এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। তাদের আন্দোলন চলাকালে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর মিল বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন বলেন, ‘চিনিকলটি এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যতদিন পর্যন্ত চালু না হচ্ছে, তত দিন পাবনা জেলার আখচাষিদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে পাবনা চিনিকলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। আর মিলটিতে কর্মরতদের অন্য চিনিকলে সংযুক্ত করা হচ্ছে।’