পারিবারিক কলহের জেরে এক গৃহবধূকে শাবল দিয়ে হত্যার চেষ্টা! থানায় অভিযোগ

নওগাঁ ও বগুড়া জেলা সীমন্তবর্তী আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে এক গৃহবধূকে লোহার শাবল দিয়ে মারপিট ও হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীসহ পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ শারমিন বানু (২৫) তাঁর স্বামী রুবেল সাহানা (৩৫), শ্বশুর ওবাইদুল সাহানা (৫৫) এবং শাশুড়ি ফুলেরা বেগম (৪৮)-এর বিরুদ্ধে আদমদিঘী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভূক্তভোগীর পরিবার ও অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে নওগাঁর পাশ্ববর্তী বগুড়া জেলা সীমন্তবর্তী আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ওবাইদুল সাহানা ছেলে রুবেল সাহানা (৩৫) এর সঙ্গে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের বাচ্চু প্রামানিকের মেয়ে শারমিন বানুর বিবাহ সম্পন্ন হয়।

তাঁদের দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড়মেয়ে রুকু মুনির বয়স (৮) এবং ছোট মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহার বয়স দেড় বছর। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা যৌতুক দেন শারমিনের বাবা। এছাড়াও একটি গরু দান করেন।

পরবর্তীতে বিদেশ যাওয়ার জন্য কিস্তি থেকে ঋণ করে দেড় লক্ষ টাকা দেন শারমিনের বাবা। অপরদিকে,রুবেল সাহানা একজন মাদকসেবী। বিগত সময়ে সে একজন ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পাতি নেতা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।

বিদেশ থেকে ফিরে এসে আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। মূলত পরকীয়ায় আসক্ত তিনি। চাঁপাপুর এলাকায় তার প্রথম স্ত্রী মেঘনা তার অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সে পক্ষের একটি মেয়ে ছিলো যাকে এক প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছে।

এরপর গোপনে আবাদপুকুর-কালিগ্রাম এলাকায় শ্যামলী নামে একজনকে ২য় বিয়ে করে। সে পক্ষের একটি ছেলে আছে। বিষয়টি গোপন রেখে শারমিন বানুকে বিয়ে করে রুবেল। শারমিনকে বিয়ে করার পরেও বগুড়ার এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে তাকে বিয়ে করে। যার পেটে তিন মাসের বাচ্চা রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই রুবেল সাহানা তাঁর ৩য় স্ত্রী স্ত্রী শারমিন বানুকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে আসছিলেন। একনকি জোরকরে একাধিক গর্ভপাত করানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর গৃহবধূ শারমিন বানুকে লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করা হয়।

এরপর সে বাবার বাড়ি এসে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করে বর্তমানে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
রুবেল সাহানার মা ফুলেরা বেগম বলেন, তার ছেলের একাধিক বিয়ে করার বিষয়টি সঠিক। তবে, ছেলে মাদক সেবন করে কি না তার জানা নেই।

আর পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের স্ত্রীকে মারপিটের বিষয়ে বলেন, ছেলের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় গালিগালাজ করায় মারপিট করছে। ছেলের পরিবারে ছোট ছোট দুটো মেয়ে থাকায় তিনিও এর একটা সমাধান চান।

চাঁপাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হিটলু বলেন,বিষয়টি অবগত আছি। নির্যাতনের শিকার আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

এ বিষয়ে আদমদীঘি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবতী বলেন, “ অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”