পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের চার সংগঠনের

খাগড়াছড়ি রাংগামাটি বান্দাবান পার্বত্য জেলা পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি জানিয়েছে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত চার গণসংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সোমবার (৯ই ডিসেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা এ দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন চলে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫বছরের শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই নিপীড়ন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে, খুন, গুম, অপহরণ, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দিয়ে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে ও তাদেরকে লেলিয়ে দিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরি¯ি’তির কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আগের মতোই ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামে সেনাশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা দমনমূলক ‘১১নির্দেশনা’ বহাল রাখা হয়েছে।

পতিত হাসিনা সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের শাস্তি কিংবা প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে তারা এখনো আগের মতো ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের মদদ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-খারাবিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৪ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে পরপর কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এতে পাহাড়িদের কয়েক শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৪জন প্রাণ হারায়।

পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র সমাধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ৪মাসে বান্দরবানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভিযানে কথিত ’বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়ে বম জাতিসত্তার ৩জনকে বিচার বহির্ভুত হত্যা, ১০জনকে বিনা কারণে গ্রেফতার, ২জনকে শারীরিক নির‌্যাতন, ৯জনের বাড়িতে হয়রানিমূলক তল্লাশী ও শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি অঙ্কনে বাধা-হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ও জেএসএস সন্তুু গ্রুপও হত্যা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়কালে ৩জন পাহাড়ি নারী ধর্ষণ ও অপর ২জন ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন বলে নেতৃবৃন্দ জানান।

বিবৃতিতে গণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিচার, সেনাশাসন প্রত্যহার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত দমনমূলক ১১নির্দেশনা বাতিলপূর্বক পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনী ভেঙে দিয়ে খুন-গুমে জড়িত নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা-হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি জানান। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক থুইলাপ্রু মারমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।