পার্বত্য পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক মালামালবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ী আটকে রাখার অভিযোগ

পার্বত্য অভিযাত পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক মালামালবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ী আটকে রাখার অভিযোগ সাধারন ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়ি হয়ে সড়ক পথে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্র সাজেকে বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেকপোস্টে সেনাবাহিনী কর্তৃক নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালবাহী গাড়িসহ যাত্রীবাহী গাড়ি অনর্থক আটকে রাখার অভিযোগ করেছে।
রাঙামাটির বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাজেকের উজোবাজার ও মাজলং বাজারের দোকান ব্যবসায়ীদের মালবাহী গাড়িসহ সাধারণ যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে বলে চরম অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বৌ যাত্রীসহ শতশত সাধারণ যাত্রী। বৈষম্য বিরোধী আচরনে বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো: মাসুদ রানা নিজেই এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি এ বিষয়ে অস্বীকার করেছে।
এলাবাসীবাসী সুত্রে জানা যায়, বুধবার(৩০শে এপ্রিল ২০২৫খ্রি: সাজেকের উজোবাজারে সাপ্তাহিক হাটবার। কিন্তু সকাল ৬টা থেকে বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেকপোস্টে সেনারা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা হয়ে দীঘিনালা উপজেলা থেকে উজোবাজারে যাওয়া মালামাল বহনকারী গাড়ি আটকে রাখে। এছাড়া তারা সাজেক-দীঘিনালা আন্ত: সড়কে যাত্রীবাহী গাড়িও অবরুদ্ধ করে রাখে।
এসময় সাধারন যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ হয়রানিমূলক কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাসুদ রানা ও জোনের গোয়েন্দা সংস্থার মাহবুব্ ও মো: শরীফ। তবে জোন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, এটি সরকারের নিরাপত্তা স্বার্থে নিয়ম মাফিক চেক করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, বঙ্গলতুলি সেনা ক্যাম্পে মেজর মো: মাসুদ-এর নেতৃত্বে মারিশ্যা-বঙ্গলতলি বাজার থেকে উজোবাজারে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মালামালও আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে গতকাল সন্ধ্যার সময় দীঘিনালা থেকে মাজলং বউ নিয়ে যাওয়া তিনটি পিক-আপও সেনারা আটকে দেয়। বরের পক্ষ লোকজন অনুনয়-বিনয় করেও গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ফলে কোন উপায় না পেয়ে ৬নং চেকপোস্ট হতে হয়রানী মূলক তাদেরকে হেঁটে যেতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাজেকের উজোবাজারে ব্যবসায়ী নাম প্রকাশের অনিছুক জানান, নৈসর্গিক সৌন্দর্য মহিমায়িত সাজেক পর্যটনের উপভোগের উদ্দেশ্যে সারাদেশে সাধারন মানুষের পর্যটন ঘুরতে সমাগম ঘটে। তাতে পানীয় জল থেকে শুরু করে নানান রকমে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী প্রচুর চাহিদা হয়ে থাকে। এই ভাবে নিরাপত্তার কথা বলে নানান হয়রানি করা উদ্দেশ্য প্রনোদিত মনে করছে ব্যবসায়ীরা।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত সোমবার(২৮শে এপ্রিল ২০২৫) সকাল হতে খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা থেকে উজোবাজার-মাজলং বাজারে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মালবাহী গাড়ী বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেক পোষ্টে আটকে দেওয়া হয় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
গত ৮ই এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস সন্তু) গ্রæুপের কমান্ডার লিটন চাকমা, গণসংযোগ বিভাগের প্রধান বিক্রম চাকমা ও কালেক্টর নীরব চাকমা মাজলং ও বাঘাইহাট এলাকার পাহাড়ি দোকান ব্যবসায়ীদেরকে উদয়পুর বাজার থেকে উচ্ছেদ করে ও উদয়পুর বাজারে যাওয়া নিষেধ করে দেয়।
এর প্রতিবাদে বাঘাইহাট ও মাজলং এলাকার ব্যবসায়ীরাও উদয়পুর বাজারে মালামাল সাপ্লাই দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়টি নিয়ে জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাসুদ রানা সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ডেকে সমাধান করার জন্য দু’দিন সময় বেঁধে দেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, পিসিজেএসএস সন্তু গ্রæুপের লোকেরা বাঘাইহাট জীপ সমিতি ও বিভিন্ন পাইকারী মালামাল সাপ্লাইয়ারদের উজোবাজার ও মাজলং বাজার মালামাল না দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কোন দোকানদার যদি মালামাল সাপ্লাই দেয়, কোন গাড়ি যদি মাল পরিবহন করে তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে সন্তু গ্রæুপের লোকেরা।
অপরদিকে বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল মো: মানুদ রানার নেতৃত্বে বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেক পোষ্টে মালবাহী গাড়িসহ সাধারণ যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দিনভর গাড়ি আটকিয়ে সাধারণ যাত্রীদের নানান তল্লাশি ও হয়রানি করা হয় বলে ভুক্তভোগীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন।
মূলত উদয়পুর বাজারে মালামাল সাপ্লাই বন্ধ থাকার কারণে পিসিজেএসএস সন্তু গ্রæুপের যোগসাজশে সেনাবাহিনী এ ধরনের হয়রানিমূলক কাজ করছে বলে তারা মন্তব্য করেন। বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেকপোস্ট এলাকায় সেনা সদস্যরা গাড়ি আটকায়।
সারাদিন যাত্রীবাহী গাড়ি আটকিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে হয়রানিমূলক তল্লাশি করে গাড়ি ছেড়ে দেয়া হলেও সন্ধ্যার পর কোন গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তম্মধ্য মাজলং বাজার বৌ যাত্রী গাড়িও আটকে রাখা হয়েছে। যার ফলে মাঝপথে থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন শতশত পাহাড়ি-বাঙালি সাজেকগামী যাত্রী। তবে পর্যটকবাহী গাড়ি যেতে করতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আর গত মঙ্গলবার(২৯শে এপ্রিল) থেকে সাজেক পর্যটকবাহী ও পর্যটনের দোকান ব্যবসায়ীদের মালামাল বাদে সেনারা উজোবাজার ও মাজলং বাজারের পাহাড়ি দোকান ব্যবসায়ীদের কোন মালামাল নিতে দেবে না বলেও জানিয়েছিল।
বৈষম্য মূলক সেনাবাহিনীর পক্ষপাত্বিত্ব এহেন কর্মকান্ডে সাধারণ লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে এলাকার জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকান্ড বন্ধের জন্য অন্তবর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার থেকে বাঘাইহাট জোনের সেনারা উজোবাজার ও মাজলং বাজারে মালামাল পরিবহনের ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে সাজেকের আরেকটি বাজার ‘উদয়পুর বাজার’ হতে পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপের লোকজন কর্তৃক মাজলং ও উজোবাজার(বাঘাইহাট) এলাকার দোকান ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ ও সেখানে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা দিলে উজোবাজার-মাজলং বাজারের ব্যবসায়ীরাও সেখানে মালামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এর জের ধরে সন্তু গ্রুপের যোগসাজশে সেনাবাহিনী উজোবাজার ও মাজলং বাজারে মালামাল পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সষ্টি করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ করেছেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন