পার্বত্য পর্যটন স্পট সাজেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বাঘাইহাট জীপ সমিতি

পার্বত্য পর্যটন ষ্পট সাজেকে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বাঘাইহাট জীপ সমিতি। সাজেকের বাঘাইহাটে জীপ সমিতি কর্তৃক গাড়ি আটকে রাখার বহুবিধ অভিযোগ রয়েছে। অহেতুক সৃস্ট ঘটনায় নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে সাজেকে বাবুধন চাকমার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।

একমাত্র আন্ত: প্রধান সড়ক খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-বাঘাইছড়ির সাজেকে বাঘাইহাট জীপ সমিতি সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তারা গাড়ি চলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা প্রদানসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার পাহাড়িরা।

তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেল ৩টার সময় বাঘাইহাট জীপ সমিতির লোকজন উজোবাজারের দোকান ব্যবসায়ী বাবুধন চাকমাকে গ্রেফতারের দাবি করে বাঘাইহাট বাজারে মানববন্ধন করেছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে থেকে একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে বাঘাইহাট জীপ সমিতির লোকজন সাজেক-দীঘিনালা আন্ত: প্রধান সড়কে পাহাড়িদের গাড়িসহ যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। স্থানীয় মুরুব্বি ও জনপ্রতিনিধিরা বার বার বিষয়টি মীমাংসা করার পরও তারা নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

গত (২১শে মে) বাঘাইহাট জীপ সমিতি কর্তৃক সাজেক-দীঘিনালা আন্ত: প্রধান সড়কে অবরোধ করে পাহাড়ি যাত্রী বহনকারী ও মালামাল পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে এর প্রতিবাদ জানায় এলাকার পাহাড়িরা। তারাও উজোবাজারে সংগঠিত হয়ে পাল্টা পর্যটন সাজেক আন্ত: প্রধান সড়ক অবরোধ করে।

পরে বাঘাইহাট সেনাজোন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-ব্যবসায়ীদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর ‘ভবিষ্যতে বাঘাইহাট জীপ সমিতি কর্তৃক গাড়ি চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নেবে’ এমন শর্তে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার(২২শে মে) আবারো পাহাড়ি-বাঙালি মুরুব্বীরা মিলে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও বাঙালি মুরুব্বীরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি। যার ফলে উভয়ের মধ্যে কোন আলোচনা হয়নি।

উল্টো বাঘাইহাট জীপ সমিতির লোকজন কোন কারণ ছাড়াই উজোবাজারের দোকান ব্যবসায়ী বাবু ধন চাকমাকে গ্রেফতার দাবি করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাঘাইহাট বাজারে মানববন্ধন করে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ফলে এলাকার পাহাড়িদের মধ্যে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিনা কারণে উজোবাজার দোকান ব্যবসায়ী বাবুধন চাকমার বিরুদ্ধে বাঘাইহাট জীপ সমিতির মানববন্ধন করার ঘটনাকে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে উজোবাজার ব্যবসায়ীসহ এলাকার পাহাড়ি ব্যবসায়ীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বাঘাইহাট জীপ সমিতি কর্তৃক সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারার প্রতিবাদ জানিয়ে উজোবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, হোন্ডা সমিতিসহ স্থানীয় জনসাধারণ তাৎক্ষণিকভাবে উজোবাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
অন্যদিকে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (মূল) সমর্থিত সন্ত্রাসী উল্লেখ করে বাবুধন চাকমার গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে বাঘাইহাট বাজার এলাকায় দিঘীনালা-সাজেক আন্ত: প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, বাবুধন চাকমা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, হুমকি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে মিছিল-সমাবেশে বাধ্য করছেন তিনি। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে তুচ্ছজ্ঞান করে বাবুধন প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার দলের সশস্ত্র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।’ এলাকাবাসী জানান দ্রæুত ব্যবস্থা না নিলে সাজেক থানা ও বাঘাইহাট জোন ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

অপরদিকে রাঙামাটির সাজেকে বাঘাইহাট জোনের সেনা গোয়েন্দাদের ইন্ধনে বাঘাইহাট জীপ সমিতি কর্তৃক সাজেক-দীঘিনালা গামী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি বাঘাইহাট ষ্টেশনে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার (২১শে মে) উজো বাজারে সাপ্তাহিক হাটবারের দিন। সকাল ৬টা হতে বাঘাইহাট জীপ সমিতির কতিপয় জীপ মালিক ও ড্রাইভার হেল্পাদের দিয়ে সাজেক-দীঘিনালা যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে। তারা বাঘাইহাট ষ্টেশনে রোড ব্লক করে রেখেছে।

দীঘিনালা থেকে ব্যবসায়ীরা উজোবাজার যেতে চাইলে বাঘাইহাট বাজার থেকে মালবাহী গাড়ি দীঘিনালা দিকে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়াও সাজেক হতে দীঘিনালায় কোন যাত্রী গাড়িও যেতে দিচ্ছে না বাঘাইহাট জীপ-পিকআপ সমিতির লোকজন।

নাম প্রকাশের অনিচছুক আটকে পড়া এক বাঙালি ব্যবসায়ী জানান, সকালে দীঘিনালা বোয়ালখালী থেকে উজোবাজারে যেতে চাইলে আমাদের মালবাহী গাড়ী আটকানো হয়।

উজোবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ আমাদের ব্যবসায়িদের হয়রানি করা হচ্ছে কখনো সেনাবাহিনী কর্তৃক, কখনো জীপ সমিতি কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল বাঘাইহাট বাজারে আটকে রাখা হয়। বুধবারও দীঘিনালা থেকে কিছু ব্যবসায়ি উজোবাজারে আসতে চাইলে তাদের আটকিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ই মে মো: জাকির নামে জীপ গাড়ি মালিকের একটি জীপ কয়েকজন স্থানীয় ছেলে কর্তৃক মাঝপথে গাড়ির চাকা পাংচার করে দেয়। এটি জানতে পেরে ইউপিডিএফের নেতৃবৃন্দ স্থানীয় মেম্বার দয়াধন চাকমার মাধ্যমে গত ১৯শে মে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু বুধবার উজোবাজার হাটবারের দিন হঠাৎ করে জীপ সমিতি কোন কারণ ছাড়াই সাজেক-দীঘিনালা আন্ত: প্রধান সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে গণহয়রানি সৃষ্টি করেছে।

জীপ সমিতি গাড়ি আটকে দেয়ার ফলে উজোবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ীসহ সাজেক-দীঘিনালা আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং চরম দূর্ভোগে পড়েন স্থানীয় লোকজন।
রাঙামাটি থেকে আসা সরকারি পরিসংখ্যান অফিসের এক কর্মকর্তার গাড়িও আটকে দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

পরে জীপ সমিতি কর্তৃক মালামাল ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এর প্রতিবাদে উজোবাজার সমিতি, মাচালঙ বাজার সমিতি, হোন্ডা সমিতি, সিএনজি সমিতি ও সর্বজনসাধারণ তাৎক্ষণিকভাবে উজোবাজার এলাকায় জড়ো হয়ে পর্যটন আন্ত: প্রধান সড়ক অবরোধ করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে প্রশাসন হস্তক্ষেপে তুলে নেয়।

এইরকম সৃষ্ট পাল্টাপাল্টি পাহাড়ি-বাঙালি মুরুব্বীরা তুচ্ছ ঘটনায় বড় ধরনের সা¤প্রদায়িক অহেতুক ঘটনা না হওয়ার আগে সচেতন এলাকাবাসী অবিলম্বে বাঘাইহাট জীপ সমিতির সা¤প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকান্ড বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষে প্রতি আহŸান জানিয়েছে।