পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রাঙ্গামাটিতে টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এতে করে রাঙ্গামাটির উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি উপজেলা নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা আশঙ্কা।

জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রূপকারী ইউনিয়ন, মাস্টারপাড়া, মধ্যম পাড়া, হাজী পাড়া, মাদ্রাসা পাড়া, এফ বøক, বটতলী, আমতলী ইউনিয়ন হ্রদের জলে ডুবে গেছে। বসত ঘর প্লাবিত এবং ধান্য জমিসহ বিভিন্ন শাক-সবজি পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়াই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। এতে ঘরবন্দি হয়ে আছে বহু পরিবার।

বিলাইড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারছড়, বহলতলী, বাঙ্গালকাটা এলাকাসহ নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে হ্রদের পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে পানি যে ভাবে বাড়ছে যেকোন মুহুর্তে এই উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

লংগদু উপজেলার মাইনী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ওই উপজেলা সদরের ঝরণা টিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচত্বর ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁও পাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনী হ্রদেও পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এইসব বাসিন্দারা।

এছাড়া হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরের হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়েছে পানি। পানি বৃদ্ধির প্রভাবে রাঙ্গামাটির সদরে আসামবস্তী, শান্তিনগর, রিজার্ভ বাজার, পৌর কলোনী, ঝুলিক্কা পাহাড়, পুরানবস্তি এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে ওইসব এলাকায় সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকাযোগে পারাপার করছে স্থানীয়রা। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রশাসন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান।

রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, “তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। সেই অনুযায়ী খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। পরবর্তীতে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।”

জেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে ১০৮.৭৯ ফিট বিপদসীমা অতিক্রম করায় বুধবার রাত ১১ টা থেকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬ টি জলকপাট দিয়ে পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তিনফুট করে পানি ছাড়া হচ্ছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ৫৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে।

এছাড়া কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ টি ইউনিট দিয়ে ৩২ হাজার কিউসেক পানি কাপ্তাই হ্রদের নিস্কাসন করা হচ্ছে। ৫ টি ইউনিট দিয়ে সর্বোচ্চ ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে বরে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার ফলে পানির স্রোতে আজ সকাল থেকে চন্দ্রঘোণা ফেরি চলাচল বন্ধ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকালে মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান।