পাহাড়ে কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী সুদত্ত চাকমা
চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ১৭ মাইল ৭৭নং তৈ চাকমা মৌজা এলাকার হেডম্যান সুদত্ত চাকমা। জনসেবার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চার একর জমিতে গড়ে তুলেছেন এই বিশাল কমলার বাগান।
ইউটিউবে ভিডিও দেখে কমলা চাষে সফল হন তিনি। পাহাড়ে কমলা চাষে তার উদ্যোগ ইতিমধ্যেই গোটা জেলায় সাড়া ফেলেছে।
জেলার নানিয়ারচর উপজেলার রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে ১৬ মাইল এলাকায় সুদত্ত চাকমার নান্দনিক কমলা বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। অনেকেই বাগান থেকে পাইকারি দরে কমলা কিনছেন এবং গাছের চারা সংগ্রহ করছেন।
কলম চারা এবং বীজের মাধ্যমে প্রায় আট শতাধিক গাছ দিয়ে আবাদ শুরু করেন। মাঝখানে পাহাড়ি ঢলের বন্যায় কিছুটা ক্ষতি সাধন হলেও গত বছর থেকে ফল দেয়া শুরু করে গাছগুলো।
সুদত্ত চাকমার লাগানো কমলা বাগানে গাছে ঝুলছে ছোট-বড় নানা প্রজাতির কমলা। এসব কমলা সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় জেলা ও জেলার বাইরে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতা ও পাইকাররা বাগান থেকে কমলা সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য।
কমলা বাগান ছাড়াও হেডম্যান সুদত্ত চাকমা সেখানে কমলার চারা উৎপাদন করে জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। ছোট ছোট স্রোতের আশেপাশে গড়ে ওঠা কমলা বাগানগুলো প্রকৃতিতে আরো সৌন্দর্য যোগ করেছে।
পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে কমলা বাগান তোলার বিষয়ে সুদত্ত চাকমা জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাগান করার ব্যাপারে আমার আগ্রহ হয়। গত কয়েকবছর আগে আমার পতিত চার একর জমিতে প্রথমে চায়না জাতের কমলা ও পরে দার্জিলিং জাতের কমলার আবাদ শুরু করি। পাশাপাশি বারি-১ ও পাকিস্তানি ইয়োলো জাতের মাল্টাও রয়েছে। ৩-৪ বছরের মধ্যেই বাগানে কমলার ফল আসতে শুরু করে। এই বছর ফলনের পরিমাণ অনেক ভালো হয়েছে। আমি পুরো বাগান প্রায় ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, “বর্তমানে আমার বাগানে ৪০০টি চায়না কমলা এবং ৪৫০টি দার্জিলিং কমলা গাছ রয়েছে। এ বছর প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করা এই কমলা বাগানটি, আমাকে শুধু স্বাবলম্বীই করেনি, ১০/১২ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও করেছে।”
এ নিয়ে নানিয়ারচর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিনু বেগম বলেন, প্রথমে মালিক শখের বশে বাগানটি শুরু করেছিলেন। এরপর আমরা কৃষি বিভাগ থেকে নানা রকম পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান শুরু করি যাতে তিনি বাগানটি বাণিজ্যিকভাবে করতে পারেন এবং স্বাবলম্বী হন। এই বছর বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে এবং তিনি আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ সবসময় তার পাশে থাকবো। যাতে এই সফলতা দেখে অন্যান্যরাও কৃষি উদ্যোক্তা হতে চায়।
এবার সুদত্ত চাকমা তার বাগান থেকে ৫-৬ লাখ টাকার কমলার বিক্রি করবেন বলে জানান। সরকারি প্রণোদনা পেলে পরিত্যক্ত পাহাড়ে পাহাড়ে কমলা চাষ আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। কমলা ছাড়াও বর্তমানে সুদত্ত চাকমা অন্যান্য পরিত্যক্ত জমিতে বিদেশী জাতের মাল্টা, কাজু বাদামসহ ১০-১৫ রকমের বিভিন্ন ফলের বাগান শুরু করেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, জেলার নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের চারা সংগ্রহ থেকে শুরু করে ফল আসা পর্যন্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ বছর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে কমলার বাগান করা হয়েছে এবং প্রতি হেক্টরে ১০ টনের বেশি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
নানিয়ারচর ছাড়াও জেলার বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলাসহ অনেক এলাকায় কমলার আবাদ করা হয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সঠিক পরিকল্পনাসহ পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিকে কমলা উৎপাদনের জন্য কাজে লাগানো গেলে পার্বত্য অঞ্চল কমলা চাষের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন