পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মোমেনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) ফরিদুল ইসলামকে মঠবাড়িয়া থানার একটি এফআইআর মামলায় আসামী করা হয়েছে। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ জন আসামীর মধ্যে তিনি ৩ নং আসামী।

সম্প্রতী তিনি জেল হাজত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।তবে তিনি ১২ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত জেল খাটলেও বিধি মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার মিতু নামে এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির ওরফে আবুু মিয়ার বড় ছেলে আরিফের বিবাহ হয়।২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিবাহের ঘটক এবং কাজী ছিলেন ফরিদুল ইসলাম। তিনি ছেলে পক্ষের আত্মীয়।

স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির স্বপ্ন নিয়ে ওই কলেজ ছাত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মেহেদী শুকানোর আগেই তার ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিবাহের ১৫ দিন পরেই যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া হয় তাকে।মধ্যবিত্ত সংসার সামলানো বাবা যৌতুক দিতে না পারায় অপবাদ দেওয়া হয় পরকিয়ার।শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নববধূকে।আর এর নেপথ্যে কাজ করেন কাজী ফরিদুল ইসলাম।

স্বামী আরিফুল ইসলাম ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে মাদারিপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন।পারিবারিক কলহ মিটানোর পর নব স্ত্রীকে বাবার বাড়ী থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মাদারিপুরে। কিন্তু সেখানে গিয়েও স্বামীর সংসারে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি ওই নারী।অপবাদ দেওয়া হয় অবৈধ গর্ভধারণের।

প্রথমে গর্ভপাতের বড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয় তাকে। কিন্তু কৌশলে এটি এড়িয়ে যায় সে।শত চেষ্টা করলেও মা হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল তার।ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মাদারিপুর থেকে কাঁঠালতলী গ্রামের বাড়ীতে যায় আরিফ – মিতু নব দম্পতি।

বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন কাজী ফরিদুল ইসলামও।অনুষ্ঠান শেষে ছক আঁকা হয় গর্ভপাতের।পরামর্শ নেওয়া হয় কাজী সাহেবের।সে অনুযায়ী এ বছরের ২০ জুলাই মিতুকে নেওয়া হয় সাপলেজায় আলো রানী নামে এক স্বাস্থ্য সহকারীর (অবঃ) কাছে। স্বামী ও শ্বাশুড়ির উপস্থিতিতে জোরপূর্বক গর্ভপাত করা হয় সেখানে।

যৌতুক,নির্যাতন ও গর্ভপাতের ঘটনায় গত ৮ অক্টোবর ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।মামলার প্রধান আসামী আরিফুল ইসলাম এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য সহকারী (অবঃ) আলো রানী পলাতক রয়েছে। আর অন্যরা জামিনে রয়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষক কাজী ফরিদুল ইসলাম জেল খাটলেও বিধি মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান,বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আগামীকাল মাদ্রাসায় যাব।বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অঃ দাঃ) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান,সাময়িক বরখাস্তের পদক্ষেপ না নিয়ে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট (সুপার) বিধিবহির্ভূত কাজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কাজী ফরিদুল ইসলাম মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।