পিস্তল ছিল খেলনার, পাওয়া যায়নি বিস্ফোরকও : পুলিশ
প্রায় তিন ঘণ্টার টান টান উত্তেজনার পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টা ঘটনার অবসান হয়। কমান্ডো অভিযানে নিহত হন কথিত বিমান ছিনতাইকারী; যার নাম মাহাদী বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বিমান ছিনতাইকারী মাহাদীর কাছে পাওয়া পিস্তলটি ছিল খেলনার। এ ছাড়া তার সঙ্গে আর কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবার রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘শাহ আমানত বিমানবন্দরে কমান্ডো অভিযানে নিহতের মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার কাছে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে সেটা ফেক, ওটা খেলনার পিস্তল ছিল।’
এর আগে রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম জহুরুল হক ঘাঁটির কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স ২৫-২৬ বছর। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। পিস্তলটি আসল কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সেনা কমান্ডোরা চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান পরিচালনা করেন। প্রথমে ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের আহ্বান জানানো হলেও তিনি কমান্ডোদের ওপর চড়াও হন। এ সময় আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিনি আহত হন। এরপর বাইরে মারা যান।
তিনি আরও বলেন, নিহত ছিনতাইকারী নিজেকে মাহাদি হিসেবে দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু নিজের স্ত্রীর কোনো ফোন নম্বর দিতে পারেননি। সৌভাগ্যবশত চট্টগ্রামে উপস্থিত ছিলেন হলি আর্টিসানের কমান্ডো অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল। তিনি এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। মাত্র আট মিনিটেই অভিযান শেষ হয়। এর আগে ছিনতাইকারীকে কথায় ব্যস্ত রাখেন এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান।
এ ছাড়া জিম্মি ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান। তিনি বলেন, ‘৭টা ১৭ মিনিট থেকে ৭টা ২২ মিনিট পর্যন্ত আমাদের কম্বাইনড অপারেশন হয়েছে।’
বেবিচক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কী কারণে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা তা এখনো জানা যায়নি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পারি স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের জের ধরে সো-কলড ছিনতাইকারী বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিমানটির খবর আমরা জানতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পিএম অফিসেও আমরা কথা বলি। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু নির্দেশনা দেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হয়।’
রাতে বিকল্প ফ্লাইটে যাত্রীদের দুবাই পাঠানো হয়
ছিনতাইকাণ্ডে বিকেল সোয়া ৫টা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অচল ছিলে। এই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে কোনো বিমান ওড়েনি, অবতরণও করেনি। সূত্র জানায় এ সময়ে মাসকাট, জেদ্দা, শারজাহ, দুবাই ও দোহা রুটে দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থার অন্তত পাঁচটি ফ্লাইটের যাত্রীরা আটকা পড়েন।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইয়ের চেষ্টা হওয়া বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইট ময়ুরপঙ্ক্ষীর ক্যাপ্টেন শফিক এ ঘটনার পর অসুস্থ বোধ করছেন। ময়ূরপঙ্খী ফ্লাইটটিও তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছাড়বে না। তাই রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকা থেকে আসা একটি বিকল্প বিমানে করে ময়ূরপঙ্খীর যাত্রীদের দুবাই পাঠানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন