পীরগঞ্জে প্রতিবন্ধী পেলকুর বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম
শারীরিক প্রতিবন্ধতাকে হার মানিয়ে বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেলাতৈর ভদ্রপাড়া গ্রামে হাবিবুর রহমান পেলকু। তাঁর থেকেও শারিরীক ভাবে সক্ষম অনেক ব্যক্তিই ভিক্ষাবৃত্তি করে বা অন্যের সাহায্য সহয়োগীতা নিয়ে জীবন ধারণ করলেও পেলকু নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করার চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, পাঁচশত টাকা পুজি নিয়ে রাস্তার মোড়ে পলিথিন টানিয়ে দোকান দিয়ে কলা সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে সৎ ভাবে জীবন যাপন করছেন তিনি। তার প্রতিবন্ধী স্ত্রীও অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে সংসারে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন। কষ্ট করে হলেও তাদের দু’সন্তানকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করার স্বপ্ন দেখছেন এ প্রতিবন্ধী দম্পতি কিন্তু দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধগতিই এখন তাদের সেই স্বপ্নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিতার ৬ শতক জমিতে ৫ ভাই ভাগিদার। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তার দুইটি সন্তান। একটির বয়স ৮ বছর। আরেকটির সাড়ে ৯ বছর। স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। আগে ভেলাতৈড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কয়েক বছর ধরে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও পাঁকা সড়কের জামতলী মোড় নামে স্থানে পলিথিন টানিয়ে দোকান দিয়ে পাঁচশত টাকা পুঁজিতে কলা সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। দুই সন্তানকে মানুষ করে ভাগ্যের চাকা ঘোড়ানোর স্বপ্ন তার। কিন্তু অর্থাভাবে তাদের পড়াশোনা চালানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ব্যবসা করে দিনে ১০০ থেকে দেড়’শ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই কোনোমতে সাংসার চলতো তার। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে তার অবস্থা শোচনীয়।
স্থানীয়রা জানান, দ্রব্য মুল্যের ঊর্ধগতির এ সময়ে অতি স্বল্প আয়ে পেলকুর সংসার চালানো কষ্টকর এর উপর কিভাবে তিনি সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন? স্থানীয়রা আরো জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি ভিক্ষা না করে ছোট দোকান করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। তার স্ত্রীও কিছুটা প্রতিবন্ধী, কানে খুব কম শুনতে পান তিনি। বর্তমানে তিনিও অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে সংসারে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। তার পরেও চরম বিপাকে পরেছেন পরিবারটি।
পেলকু জানান, তিনি জন্মের পর থেকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছেন। কোনদিন কাউকে বুঝতে দেননি। নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তেমন পুঁজি নাই। তাই ছোট দোকান ধরেছেন। এদিকে তার একটি চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পান না। ডাক্তার চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর যেতে বলেছেন কিন্তু টাকার অভাবে এখনো যেতে পাছেন না। নিজে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও স্ত্রী পান না বলে জানান পেলকু।
সরকারি অনুদান বা সহযোগিতা পেলে পেলকু তার দোকানে পুঁজি বাড়িয়ে সংসার পরিচালনা ও সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারতেন। তা না হলে তার দুঃখ হয়তো দুঃখই থেকে যাবে বলে জানান তিনি।
তার দুই সন্তানকে মানুষ করতে পারলে বড় হয়ে তারা হয়ত তাকে দেখা শুনা করবে, জীবনের শেষ বয়সে একটু ভাল থাকতে পারবেন এমন আশা তার। কিন্তু জিনিসপত্রের যে দাম! ছোট দোকান করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করে তার সে আশা পুরন করা কটা সম্ভব হবে-এটাই এখন ভাবার বিষয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম জানান, পেলকুকে অবশ্যই সহযোগীতা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন